মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের পোয়াবারো চাপে বাইডেন

প্রতিদিন ডেস্ক

ট্রাম্পের পোয়াবারো চাপে বাইডেন

গুলিতে রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোয়াবারো অবস্থা হয়েছে। তাঁর প্রতি ভোটারদের সমর্থন বেড়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী মহলও তাঁর প্রতি নতুন করে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে কঠিন চাপের মুখে পড়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ভিতরে-বাইরে থেকে জোরালোভাবে বলা হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, ইউএসএ টুডে।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনি জনসভায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় তাঁর হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। বিনিয়োগকারীদের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়াচ্ছে। ১৯৮১ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের ওপর গুলি চালানোর পর এবার ট্রাম্পের ওপর হামলা হয়েছে, এ হামলার কারণে আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারেন। ভেন্টেজ পয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা নিক ফেরেস বলেন, ‘তাঁকে হত্যার চেষ্টার পর জরিপে ট্রাম্প ২২ পয়েন্ট এগিয়ে গেছেন। এ নির্বাচনে তাঁর ভূমিধস জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা ট্রাম্পের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের মতো ব্যবসায়ী নেতারাও ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, জো বাইডেনের প্রতি নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান আরও জোরালো হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে এক নির্বাচনি বিতর্কে দুর্বল পারফরম্যান্সের পর বাইডেনের সমর্থকরা তার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন। রয়টার্স ও ইপসসের জরিপে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে অভিবাসন ও অর্থনীতি প্রধান ইস্যু। ভোটারদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, অর্থনৈতিক ইস্যুতে ট্রাম্প তুলনামূলকভাবে ভালো প্রার্থী। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা লিখেছেন, গত ২০ বছরের পাঁচটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিইওদের আস্থা, ভোক্তা মনোভাব এবং ছোট ব্যবসার আশাবাদ রিপাবলিকান জয়ের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। কিছু কোম্পানির আয়ের সম্ভাবনা বাড়তে পারে, যদি ট্রাম্প নির্বাচনে জেতেন।

ট্রাম্প হত্যাচেষ্টায় এআর-১৫ রাইফেল : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার উদ্দেশ্যে

হামলাকারী যুবক এআর-১৫ মডেলের একটি রাইফেল ব্যবহার করেছে। হামলায় আগ্নেয়াস্ত্রটি শনাক্ত করা হয়েছে। নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি তথ্যানুসারে, এআর-১৫ রাইফেল একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। অস্ত্রটি ব্যবহারের সময় শুটারকে ট্রিগার টেনে ফায়ার করতে হয়, কিন্তু পরবর্তী রাউন্ডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চেম্বারে লোড হয়ে যায়। আর্মালাইট দ্বারা নির্মিত অস্ত্রটি ২০০৪ সালে অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অবসানের পর আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হয়ে ওঠে। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে ২০ জনের মধ্যে একজন মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক এআর-১৫ আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক ছিলেন। আমেরিকায় ১৭টি ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনার মধ্যে অন্তত ১০টিতে এ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

যা বললেন ট্যাম্প : রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে মিলওয়াকিতে যাওয়ার পথে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘জীবন প্রায় হারাতে বসার অভিজ্ঞতার’ বর্ণনা করেন। তিনি এ ঘটনাকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াশিংটন এক্সামিনার পত্রিকাকে ট্রাম্প বলেন, ‘বাস্তবতা জেঁকে বসেছে। আমি জনতার দিক থেকে অন্যদিকে তেমন তাকাই না। ওই মুহূর্তে আমি যদি তা না করতাম, তাহলে আজ আমি এখানে কথা বলতে পারতাম না।’ ট্রাম্প জানান, তার চিকিৎসকেরা তাকে বলেছেন, তার ফিরে আসা একটি ‘অলৌকিক ঘটনা’। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তার ডান কান মোড়ানো ছিল বড় সাদা ব্যান্ডেজে। তার স্টাফরা ছবি তুলতে নিষেধ করছিলেন। ট্রাম্প এ সময় একই সাক্ষাৎকারে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার এখানে থাকার কথা ছিল না, আমার তো মারা যাওয়ার কথা।’ গোলাগুলির মুহূর্ত সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানতাম পৃথিবী এ ঘটনা দেখছে। আমি জানতাম, ইতিহাস এর বিচার করবে। আমি এও জানতাম যে, এই মানুষদের জানাতে হবে আমরা ঠিক আছি।’ নিউইয়র্ক পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আমি দেশকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করতে চাই। তবে আমি জানি না সেটি সম্ভব কি না। মানুষজন খুবই বিভক্ত হয়ে আছে।’ ট্রাম্প এর আগে ট্রুথ সোশ্যাল রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনের সময় দুই দিন পেছানোর ইচ্ছার কথা জানালেও পরে নির্ধারিত সময়সূচিতেই অটল থাকেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একজন হামলাকারী বা সম্ভাব্য আততায়ীকে সম্মেলনের সময়সূচি পরিবর্তনে আমাদের বাধ্য করতে দিতে পারি না।’ উল্লেখ্য, রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে ট্রাম্প গতকালই উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে পৌঁছান। হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফেরার ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর তিনি সেখানে গেছেন। এই কনভেনশনেই ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান পার্র্টির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার সেখানে মঞ্চে ভাষণও দেবেন ট্রাম্প। আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় রাজনীতি জমজমাট রূপ নিয়েছে। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দলের দুই বর্ষীয়ান প্রার্থীর ভোটের লড়াই দেখতে উন্মুখ আমেরিকানরা।

নিহত কোরির প্রতি মার্কিনিদের শ্রদ্ধা : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে হামলার ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। হামলায় নিহত ওই ব্যক্তির নাম কোরি কম্পেরেটোর। তার বয়স ৫০ বছর। পেশায় ছিলেন দমকলকর্মী। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত কোরিকে বীর বলে উল্লেখ করেছেন পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের গুলির কবল থেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। হামলায় আরও দুজন আহত হন। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। পুলিশ আরও জানায়, পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গের বাইরে বাটলারের সমাবেশস্থল থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে সার্ভারে থাকতেন কোরি। গভর্নর জোশ শাপিরো কোরির স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। শাপিরো জানান, কোরি প্রতি রবিবার গির্জায় যেতেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে ভালোবাসতেন। বিশেষ করে তিনি তার পরিবারকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কোরির বীরের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে শাপিরো আরও জানান, ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ছিলেন কোরি। শনিবারের সমাবেশে উপস্থিত হতে পেরে তিনি অনেক খুশিও ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল অনুসারে, দমকলের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কোরি একটি প্রকল্প এবং একটি প্লাস্টিক তৈরির কারখানায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। কোরির প্রতিবেশী ম্যাট অ্যাকিলিস বলেছেন, তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কোরির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি জানান, কোরি একজন ভালো স্বামী, বাবা ও দমকলকর্মী ছিলেন। পরিবারকে গুলি থেকে রক্ষা করতে জীবন দিয়েছেন।

কীভাবে সামলাবেন বাইডেন : প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যেভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন জো বাইডেন, তাতে তার প্রার্থিতার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। সেই ধাক্কা সামলে মাত্রই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করছিলেন ৮১ বছর বয়সি এ নেতা। গত ১২ জুলাই ডেট্রয়েটে বেশ তেজোদীপ্ত ভঙ্গিতে ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য রাখেন বাইডেন। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পাশার দান যেন আবার উল্টে গেছে।

কনিবার পেনসিলভানিয়ার বাটলারে ট্রাম্পের নির্বাচনি সভায় চলল গুলির ঘটনার ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের মনোযোগ এখন ট্রাম্পের দিকে। তার আচরণ ও নির্বাচনি এজেন্ডার নেতিবাচক দিকগুলো ভোটারদের সামনে তুলে ধরার যে চেষ্টা করছিলেন বাইডেন, সেটি যেন এক ফুঁতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। সমর্থকদের চোখে ট্রাম্প এখন ‘আহত বাঘ’ একজন ‘হিরো’- যিনি দেশের জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশের নেতৃত্বের জন্য তার চেয়ে বড় দাবিদার আর কে হতে পারে- এমন প্রশ্নই অনেকের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাতে ভর করে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেতে পারেন ৭৮ বছর বয়সি এ নেতা।

এ অবস্থায় ট্রাম্পকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট? ডেমোক্র্যাটরা কি নির্বাচনে জেতার আশা ছেড়ে দেবে? এ বিষয়ে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুøমবার্গ বলছে, বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারণার পথ এখন অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা তার যুক্তিখণ্ডনের প্রচেষ্টাগুলোকে বাধাগ্রস্ত করবে। তিনি যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি জাতীয় রাজনীতিতে শালীনতা ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনবেন, সেটির মূলেও আঘাত করবে এ ঘটনা। এদিকে এমন প্রেক্ষাপটে ওভাল অফিস থেকে দেওয়া ভাষণে দেশবাসীকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি শান্ত করার দায়িত্ব উভয় পক্ষেরই। আসন্ন নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘পরীক্ষার সময়’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর