মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

উত্তেজনা বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

উত্তেজনা বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা দেশটিতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গেমচেইঞ্জার হতে পারে। গুলিবিদ্ধ কান দিয়ে রক্তের ধারা বেয়ে ট্রাম্পের মুখে পড়ছে কিন্তু তাঁর স্থির ও লড়াকু মনোভাব তাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাতেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

ট্রাম্পের ওপর এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। বয়স এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন থেকে সরে আসার জন্য এমনিতেই জো বাইডেনের ওপর চাপ রয়েছে। এই হত্যাচেষ্টায় যারা শুরুতেই শক্তভাবে নিন্দা জানিয়েছেন তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আমার বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। রাজনীতি ও গণতন্ত্রে কোথাও সহিংসতার স্থান নেই। আমি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। হামলায় নিহতের পরিবার, আহত ও আমেরিকার মানুষকে নিয়ে আমরা ভাবছি এবং তাদের জন্য আমাদের দোয়া রইল।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট এই হামলায় নিন্দা জানিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্রাম্পকে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় এই ধরনের সহিংসতার স্থান নেই। এটা অসুস্থতা। যেসব কারণে আমাদেরকে দেশকে একত্রিত করতে হবে এটাও এর মধ্যে একটি। আপনি এই ধরনের ঘটনা সহ্য করতে পারেন না। আমরা এমন হতে পারি না। আমরা এটা ক্ষমা করতে পারি না।’ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদ্বয়- জর্জ ডব্লিও বুশ ও বারাক ওবামাও ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু এটা পরিষ্কার নয় যে, দুই শিবির থেকেই হামলার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিভেদের সেতু তৈরি করবে। প্রকৃতপক্ষে দেশটির রাজনীতির মেরুকরণ এতটা শক্তিশালী যে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে উত্তেজনা বাড়াবে। কী কারণে এই হামলা হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ট্রাম্প এই হামলায় নিজেকে ওই সমস্ত ডেমোক্রেটদের শিকার বলে চিত্রিত করতে পারছেন যারা আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া থেকে যে কোনো মূল্যে ট্রাম্পকে থামাতে চায়। ট্রাম্প কখনোই ডেমোক্রেটদের অভিযুক্ত করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি যে আগামী নির্বাচনে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে তাকে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগগুলোতে জড়ানো হয়েছে। সুতরাং এ ঘটনার পর ট্রাম্প সহানুভূতি ভোট সংগ্রহ করতে পারবেন। পেনসেলভানিয়ার ভোটার যারা কখনোই ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি এবং যারা ট্রাম্পের বিরোধিতা করে রিপাবলিকান দলের অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করেন, তাদের সবার ভোটও এখন তিনি পেতে পারেন। এই হত্যাচেষ্টা আমেরিকানদের ও মিডিয়ার দৃষ্টি বাইডেন থেকে সরিয়ে ট্রাম্পের দিকে নিয়ে যায়। এর এই অর্থ হতে পারে যে, বাইডেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন এবং রিপাবলিকানদের জন্য সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসে নেওয়ার সুযোগ বাড়িয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় রিপাবলিকান দলটি ভিতরে ভিতরে উৎফুল্ল এবং দলটি হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক পরিণতির উন্নয়ন হিসেবে দেখছে। উইসকিনসনে চলতি সপ্তাহে শুরু হওয়া রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন ট্রাম্পকে তাদের প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন দেবে। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, ভারতের নীতি নির্ধারকগণ নিঃসন্দেহে হামলা-পরবর্তী ঘটনাগুলো সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন। বছরের পর বছর নয়াদিল্লি দেশটির উভয় দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতার মানে সমগ্র বিশ্বের জন্য দুঃসংবাদ যেখানে কভিড-১৯ এর ধকল এখনো চলছে এবং ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে দুই সংঘাতের মধ্য দিয়ে চলছে সারা বিশ্ব। ভারতও এর বাইরে নয়।

লেখক : ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব

সর্বশেষ খবর