মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

শহীদুল্লাহ্ হলে হঠাৎ ছাত্রদল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বের করে দেয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রলীগ ও কোটাবিরোধীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের অভিযোগ, কোটা আন্দোলনকারীদের ব্যানারে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তারা হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের কক্ষ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল শহীদুল্লাহ হল এবং এর আশপাশের এলাকায়।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হলের ভিতর অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ছেন। পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের বাইরের সড়কে অবস্থান নিয়ে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওই এলাকায় অন্তত দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে অনেকটা রণক্ষেত্রের রূপ নেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকা। এ সময় আরও ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্রদলের অনেক সন্ত্রাসী কোটা আন্দোলনের সাইন বোর্ড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। বেশ কিছু দিন ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে আমি ফেসবুকে লিখছিলাম। তবে এক সপ্তাহ আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি পেয়ে আসছিলাম আমি। এর বাস্তবায়ন হলো আজ। তিনি আরও বলেন, রাজু ভাস্কর্য এলাকা খালি করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা হঠাৎ করেই শহীদুল্লাহ হলের দিকে ছুটে যায়। আমার ২৩২ রুমটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। রুমে আমার সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ এবং জিনিসপত্র ছিল। হলের কর্মচারীরা বাধা দিয়েও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।

জানা গেছে, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসের কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারীরা পিছু হটলে তাদের ধরে ধরে মারধর করা হয়। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় দোয়েল চত্বরে দেখা যায়, শহীদুল্লাহ হলের ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এ কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সামনে এগোতে পারছিলেন না। যদিও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দোয়েল চত্বরে জড়ো হচ্ছেন। সে সময় ওই এলাকায় পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা আসেন।

হলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান : রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন আন্দোলকারীদের নিজ নিজ হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক ‘দালাল দালাল’ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। রাত পৌনে ৮টার দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের হাতে সব কিছু নেই। সুযোগ থাকলে আমরা বহিরাগতদের আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আমরা হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের মাধ্যমে হলের ভিতর প্রবেশ করিয়ে বহিরাগত যারা আছে তাদের বের করার ব্যবস্থা করব। শিক্ষার্থীদের হলে নেওয়ার আগে বহিরাগতদের বের করাটা কঠিন হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে কয়েক শ পুলিশ অবস্থান করছে। এর আগে তারা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হল গেট থেকে ব্যারিকেড দিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে নিয়ে যান।

কোটা আন্দোলনকারীদের হটাতে অ্যাকশনে পুলিশ : কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাবিতে অবস্থান নেয় পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাবির দোয়েল চত্বর থেকে অভিযান শুরু করে তারা। এ সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি গ্রুপ এবং পুলিশের সাঁজোয়া যান একসঙ্গে সামনের দিকে যেতে দেখা যায়। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেওয়া শুরু করে। এ সময় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর