মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
ড. ইউনূসের প্রশ্ন

মানুষকে কেন পশুর মতো খাঁচায় ভরে রাখবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতের কাঠগড়ায় লোহার খাঁচা রাখার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘মানুষকে কেন পশুর মতো খাঁচায় ভরে রাখবে? এটা মানবতার প্রতি অপমান। এটা বিচারের বিষয় না, কিচ্ছু না। এটা নেহায়েত একটা অপমান করার বিষয়। সারা জাতিকে অপমান করার বিষয়। কাজেই জাতি অপমান থেকে মুক্ত হতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ খাঁচাটাই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া উচিত। কারও জন্যই এটা প্রয়োজন পড়ে না। এটা আদালতে রাখা মানেই হলো তোমাকে অপমান করতে এখানে রেখেছি। এখানে তো বিচারের জন্য এসেছি, অপমান হওয়ার জন্য তো আসিনি।’ গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ হাজিরা শেষে আদালত চত্বরে তিনি এসব কথা বলেন।

আপনি কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, কিছু একটার শিকার তো হচ্ছি, এটা তো পরিষ্কার। সেটা হিংসা বলেন প্রতিহিংসা বলেন বিদ্বেষ বলেন সবকিছু মিলিয়েই হচ্ছি। এ সময় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন ড. ইউনূস। এদিন সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুনানি ও বাগবিতণ্ডা হয়।

শুনানি শেষে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মামলাটি উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ আছে। আগামী ২১ তারিখ এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আমরা আজ আদালতকে বলি, ১৪ আগস্ট ফ্রান্সে অলিম্পিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর (ড. ইউনূস) উপস্থিত থাকার কথা। এজন্য এর পরে একটা তারিখ দেন। কিন্তু তিনি সময় দিলেন পাঁচ দিন। আমি বললাম, আপনার সামনে যে কেস ডায়েরিটা আছে তাতে অন্য মামলার তারিখ দেওয়া হচ্ছে এক মাস, দুই মাস, আড়াই মাস পর। সেখানে ড. ইউনূসের মামলায় এমন কী ব্যাপার যে, পাঁচ দিন, সাত দিন পর তারিখ দিতে হবে? যদি আপনি মনে করেন ড. ইউনূস দাগি আসামি, তাহলে এ মামলাটা দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষকে ডেকে এ মামলার জন্য ৫ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়। অথচ ওনার অলিম্পিকের উদ্বোধনের তারিখ ১৪ আগস্ট। দেশের একজন গর্ব, সারা পৃথিবীর মানুষ বিশ্ব অলিম্পিকের উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশের একজন মানুষকে নিতে চায়।

এটাও বন্ধ করে দিতে চায় যে, তিনি যেন সেখানে যেতে না পারেন। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আজকের দিনটা ছিল সাক্ষ্যের জন্য। সাক্ষীকে আমরা আদালতে হাজির করেছি। তারা সাক্ষ্য পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের আসামি বিদেশে যাবেন নাকি অলিম্পিকে যাবেন। তিনি না থাকলেও তো মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। কিন্তু তাদের কথা হলো আমরা থাকব, লম্বা সময় নিব এবং মামলার কার্যক্রম বিঘ্নিত করব। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে প্রভাবিত করছে আসামি পক্ষের এমন অভিযোগের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালতকে আমরা কীভাবে প্রভাবিত করব তা তো জানি না। সাক্ষীর তারিখ ছিল। সাক্ষী নিয়ে আসছি। ওনাদের মুখে ও শরীরে অনেক শক্তি। কাজেই ওনারা যা মন চায় তাই বলছেন। আমাদের তো কিছু বলার নেই।’ প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন আদালত। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। তিনি গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রথমে আসামি ছিলেন ১৩ জন। চার্জশিটে নতুন একজন আসামি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ড. ইউনূস বাদে চার্জশিটের অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলাম।

 

সর্বশেষ খবর