শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংঘর্ষে নিহত ২০ আহত ৬ শতাধিক

রণক্ষেত্র, মহাখালীতে ব্যাংক, দুর্যোগ ভবনে হামলা অগ্নিসংযোগ, বাসাবাড়িতে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংঘর্ষে নিহত ২০ আহত ৬ শতাধিক

রাজধানীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। যাত্রাবাড়ীতে ব্যাপক সংঘর্ষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ এবং সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষে ব্যাপক গুলি, টিয়ারগ্যাস, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো স্থানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জড়িয়ে পড়লে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গুলিবর্ষণ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড বোমা ব্যবহার করে। এসব সংঘর্ষে একজন সাংবাদিকসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক।

সংঘর্ষ চলাকালে সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন ভাঙচুর ও পড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া আগুন দেওয়া হয় মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন এবং সেতু ভবনে। উত্তরা পূর্ব থানা, মহাখালীতে ব্যাংক এবং রাজধানীর বেশ কয়েকটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। দিনভর এসব সংঘর্ষ চলাকালে সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জনমনে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ছাড়া মিরপুর, উত্তরা, আবদুুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, সায়েন্সল্যাব, বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দিনভর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে এ পর্যন্ত চারজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন। নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসে কর্মরত ছিলেন। সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাঁকে আনা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাঁর শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে। নিহত অন্য তিনজনের মধ্যে ওয়াসিমকে (৩০) আনা হয় যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত এলাকা থেকে। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত নাজমুলকেও যাত্রাবাড়ী থেকে আনা হয়েছে। আনুমানিক ২০-২২ বছর বয়সি নাজমুলের শরীরে কোপের আঘাত রয়েছে। এ ছাড়া নিহত মোহাম্মদকে আনা হয়েছে আজিমপুর। আনুমানিক ২০ বছর বয়সি মোহাম্মদের শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নাজমুলের স্বজনরা উপস্থিত হন। তাঁরা দাবি করেছেন, নাজমুল ব্যবসায়ী। ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক আগে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সংঘর্ষের মধ্যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। নরসিংদীতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের তাহমিদ তামিম (১৫) ও মো. ইমন মিয়া (২২) নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে ইমন এবং জেলা হাসপাতালে তাহমিদের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরেও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। বিকালে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের মধ্যে তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের একজন পটিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র মোহাম্মদ ইমাদ (১৮)। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাঁর বয়স ২২ বছর। এ আটজনকে নিয়ে গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন। সংঘর্ষে নিহত চারজনের লাশ রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান বলেছেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। অন্য দুজনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এর আগে উত্তরায় পুলিশ ও র?্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তাঁদের একজনকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং আরেকজন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান। দুই হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে খালে পড়ে মারা গেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র সেন। বিভাগীয় প্রধান ড. তামিজউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। ধাওয়া খেয়ে রুদ্র খালে পড়ে যান। উদ্ধার করে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকালে মারা যান।

উত্তরা-আজমপুরে সংঘর্ষ : উত্তরা-আজমপুরে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় গুলিতে শিক্ষার্থী-পথচারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। তাদের লাশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালটিতে আহত আরও ৩ শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন।

পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে জড়ো হয় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা মিছিল নিয়ে মূল সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ ও র?্যাব তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এর পরই বেলা ১১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টার দিকেও সংঘর্ষ চলছিল। প্রথমে উত্তরার আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাগ হয়ে উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট ও শপিং মল। ব্যস্ততম উত্তরা নিমেষেই ফাঁকা হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত রাস্তায় দাপট দেখাতে শুরু করেন। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে ছয়জন নিহতসহ ২ সহস্রাধিক আহত হয়েছে। আহতদের ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের, উইমেন্স মেডিকেল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালসহ স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মেরুল বাড্ডা : কমপ্লিট শাটডাউনের অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় রাস্তা অবরোধ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে মেরুল বাড্ডা এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে এক কলেজছাত্র নিহত হন। নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম জিল্লুর শেখ। তিনি রাজধানীর ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। আফতাবনগরে একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। এ ছাড়া রামপুরায় দুলাল মাতবর নামে আরেকজন মারা গেছেন। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তবে এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, পুলিশসহ ২ শতাধিক আহত হয়েছেন।

প্রগতি সরণিতে সড়ক অবরোধ : প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের সড়কে আইইউবিসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় দুই পাশ থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

যাত্রাবাড়ীতে নিহত ৪ : গতকাল যাত্রাবাড়ী কাজলারপাড় এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিক রিকশাচালকের নাম জানা যায়নি। তার আনুমানিক বয়স ৩০ বছর। আন্দোলন চলাকালীন রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পথচারী রেজাউল ইসলাম অনিক ও সৌরভ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। ওই সময়ে এই রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পাশেই তার রিকশাটি পড়েছিল। আমরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সেতু ভবনে আগুন : রাজধানীর মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবন ও বনানী সেতু ভবনে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। চারটি ইউনিট পথে আটকে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে পারছে না। গতকাল বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবন ও বনানী সেতু ভবনে আগুনের খবর পাই। খবর পেয়ে দ্রুত চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।

মিরপুরে সংঘর্ষ, গোলচত্বরে আগুন : রাজধানী মিরপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দুপুরের দিকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ওপরে মেট্রোরেলের লাইনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়াও কালশী ও ইসিবি চত্বরেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। বিকালের দিকে ইসিবি চত্বর পুরোপুরি আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়। বিকাল ৪টার দিকে ইসিবি চত্বরের অদূরে ফ্লাইওভারের শুরুতে একটি মোটরসাইকেল জ্বলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, মিরপুর, কালশী ও ইসিবি চত্বর সড়ক দখলে ছিল বিইউপি ও এমআইএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এর আগে বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশ প- করে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও আশপাশের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১০ গোলচত্বরে এসে অবস্থান নেন। ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে স্বাধীনতাবিরোধীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির’ প্রতিবাদে একটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠান করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের হামলায় সেই সভা প- হয়ে যায়। ওই সময় পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সাঁজোয়া যানসহ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে অবস্থান নেন। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা ওই দিকে চলে যান। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীরা তখন আশপাশের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন। এরপর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।

সায়েন্স ল্যাবে সংঘর্ষ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পলাশীর মোড়, সায়েন্স ল্যাব ও নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

ধানমন্ডি রণক্ষেত্র, নিহত ১ : গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। সেই সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ নিহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন আরও শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা সাতমসজিদ রোডে জড়ো হন। এরপর তাদের সঙ্গে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

বিটিভি ভবনে আগুন : রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের গেট ও ভিতরে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকালে এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রামপুরা-বাড্ডা পুরো সড়ক ছিল শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দখলে। বাঁশ, লোহার রড নিয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের দেখা যায়। পরে বিকালের দিকে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে টিয়ার শেল, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের কয়েকজনকে বনশ্রী ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর