শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

মেধায় ৮০ শতাংশ নিয়োগের প্রস্তাব দেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেধায় ৮০ শতাংশ নিয়োগের প্রস্তাব দেবে সরকার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে সরকার। কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আগামী রবিবার শুনানি হবে। সেই শুনানিতে মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ নিয়োগের প্রস্তাব আদালতে উপস্থাপন করবে সরকার। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে একথা বলেন। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আলোচনার কোনো পরিস্থিতি নেই, রক্ত মাড়িয়ে কোনো সংলাপ হতে পারে না। তারা আজও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। 

এর আগে গতকাল বিকালে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে এসে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবির সঙ্গে সরকার নীতিগতভাবে একমত বলে জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা চাইলে যে কোনো সময় আলোচনা হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে সরকার। বিকাল পৌনে ৩টায় জাতীয় সংসদের ট্যানেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কোটা সংস্কারের দাবির সঙ্গে সরকার নীতিগতভাবে একমত বলেও জানান তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসব। তারা যখনই আলোচনায় বসতে চায়... সেটা যদি আজকে হয়, আজই আমরা বসতে রাজি আছি।’ সেই সঙ্গে আপিল বিভাগে আগামী ৭ আগস্ট যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তাও এগিয়ে আনার ব্যাপারে আপিল করবে সরকার। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঘোষণা দিতে বলেছেন যে, আগামী ৭ আগস্ট মামলার যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তা যেন এগিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমি সেই মর্মে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি, আগামী রবিবার তিনি সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিল করবেন, যেন শুনানিটা এগিয়ে আনা হয়।’ প্রধান বিচারপতি এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। এ ছাড়া আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে যে বিচার বিভাগীয় কমিটির কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি তৈরি করেছি। এই প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে, আমার বিশ্বাস তিনি এই কমিটিতে সম্মতি জানাবেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি এবং বিশদভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যালোচনা সবই করেছি। কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন যে শিক্ষার্থীরা, তাদের কিন্তু এ কয়টা দাবিই ছিল। সরকার যেহেতু তাদের দিক বিবেচনা করে এই দাবিগুলোতে রাজি হয়েছেন, আমার মনে হয় আজ থেকে আন্দোলন করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। আন্দোলনকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অনুরোধ করছি... একজন পিতৃতুল্য নাগরিক হিসেবে আমি তাদের অনুরোধ করছি, তারা যেন সহিংসতা না করে এবং আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহার করে।’ এ ঘটনায় সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজ তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় বসতে রাজি আছে। আজকে আমরা রাজি হয়েছি। এটাতে দেরি কোথায় হলো।’ তিনি বলেন, ‘মামলার শুনানি হলে সরকারপক্ষ একটা প্রস্তাব দেবে। আমরা (সরকার) যেহেতু কোটা সংস্কারের পক্ষে, আমরা এ প্রস্তাব দেব, কোটা সংস্কারের জন্য।’ বিচার বিভাগের চেয়ে ক্ষমতাশীল নির্বাহী বিভাগ। দেশে এমন পরিস্থিতি হওয়ার আগে নির্বাহী বিভাগ কেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। প্রথম কথা হচ্ছে, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোটা বাতিল করা হয়েছিল। এ বাতিলের যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা হাই কোর্টে গেলেন। আন্দোলনকারীরা তখন কোনো পক্ষভুক্ত হননি। সম্প্রতি যে রায় হলো, তখন কিন্তু তাদের আন্দোলন শুরু হলো। তখনো তারা আদালতে যাননি। পরে আন্দোলনকারীদের পক্ষে যারা আদালতে গেছেন, তাদের আগেও সাধুবাদ জানিয়েছি। যখন আদালত এই রায় দিয়েছেন, তখনই এই প্রশ্ন ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমি শুধু এটুকু বলব, তাদের আন্দোলনে তারা তাদের বক্তব্য বলেছেন। আমরা তাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলেছি এবং আদালতে যেতে অনুরোধ করেছি। আদালতে তারা গেছেন, আদালত সিদ্ধান্ত নিলেই আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ইতিহাস খতিয়ে দেখতে পারেন। আদালতে যখন কোনো প্রশ্ন ওঠে, তখন আদালত যতক্ষণ পর্যন্ত সেটার শেষ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাদবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার পরিস্থিতি নেই : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল সন্ধ্যায় লিখিত বক্তব্যে এই তথ্য জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়ে সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর দায় সরকারেরই। সরকার আলোচনার কোনো পরিস্থিতি রাখেনি।’ তিনি বলেন, ‘যদি এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজপথ থেকে সরানো না হয়; যদি হল, ক্যাম্পাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়া হয়, যদি এখনো গুলি অব্যাহত থাকে তাহলে সরকারকেই সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে। কেবল কোটা সংস্কার করলেই ফয়সালা হবে না। প্রথমে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে আন্দোলন দমনের প্রচেষ্টা করছে। এখন সংলাপের নামে, দাবি আদায়ের নামে নতুন প্রহসন করছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির নামে কোনো প্রসহন মেনে নেওয়া হবে না।’ ছাত্র হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসগুলোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। অনতিবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করে রাজপথ থেকে অপসারণ করতে হবে। শহীদের রক্তের ওপর কোনো সংলাপ হবে না। সরকারকেই সমাধানের পথ বের করতে হবে।’ তিনি বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের আজ রাতের মধ্যেই গ্রেপ্তার অথবা গুম করে ফেলতে পারে। আপনারা শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘রক্ত মাড়িয়ে সংলাপ নয়’। বিকালে আইনমন্ত্রীর আহ্বানের পর পরই তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। এর আগে সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আন্দোলনের পাশাপাশি আলোচনার জন্যও প্রস্তুত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর