শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দৃষ্টি কাল উচ্চ আদালতে

কোটা নিয়ে হবে চূড়ান্ত আদেশ

আরাফাত মুন্না

চলমান কোটা আন্দোলনে হামলা-সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মৃত্যুর খবরের মধ্যেই আগামীকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য উঠছে কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা দুই লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) আবেদন। এদিনই চূড়ান্ত শুনানির আশা প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এদিন কোটা বাতিল করে সরকারের প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায়ই বহাল থাকছে, নাকি হাই কোর্টের রায় বাতিল হচ্ছে আপিল বিভাগে, তা জানতে কাল সবার দৃষ্টি থাকবে উচ্চ আদালতে।

এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে লিভ টু আপিল আবেদন করা হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশেষ চেম্বার জজ আদালত বসিয়ে দুই আবেদন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী রবিবার দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। পরে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে থাকা কার্যতালিকায় দেখা যায়, বিষয়টি শুনানির জন্য তিন নম্বর ক্রমে রয়েছে।

লিভ টু আপিল শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী রবিবার লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রয়েছে। ওইদিন দুই পক্ষই আদালতে উপস্থিত থাকবে। তাই আমি আশা করছি, নতুন করে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) না দিয়ে ওই দিনই চূড়ান্ত শুনানি করে ফেলবেন আদালত। ফলে কোটা নিয়ে জটিলতার নিরসনও ওই দিনই হবে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হকও রবিবারই আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সব পক্ষই আদালতে উপস্থিত থাকবে। তাই ওই দিনই চূড়ান্ত শুনানি হবে।

নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন হাই কোর্ট। হাই কোর্টের রায়ের পর কোটা বাতিল চেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।

এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে গত ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীও আপিল বিভাগে আবেদন করে আবেদন করেন। ওইদিনই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সেই আবেনের শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত। পরে ১০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে বলে দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে গত ১৪ জুলাই হাই কোর্টের রায়ের ২৭ পৃষ্ঠা পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে হাই কোর্ট। ওই রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনির জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, কোটা বজায় রাখতে আদেশ দেন হাই কোর্ট।

রায়ে হাই কোর্ট আরও বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে। পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর লিভ টু আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর