রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন, চলছে কারফিউ

♦ চলছে সেনাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার টহল ♦ কারফিউ অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা : ডিএমপি ♦ রবি-সোম দুই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা ♦ গণমাধ্যম কারফিউর আওতামুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন, চলছে কারফিউ

রাজধানীসহ সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে সেনা সদস্য। অসুস্থ এক ব্যক্তিকে রিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে সংঘটিত নৈরাজ্য-নাশকতা রোধে সারা দেশে কারফিউ জারি ও সেনাটহল জোরদার করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গতকাল কারফিউ জারির প্রথম দিনেই সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোয় সতর্ক প্রহরায় নিয়োজিত ছিলেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় সন্দেহ হলেই গাড়ি ও পথচারীদের তল্লাশি করেন তারা। রাজধানীর মিরপুর-১০, মহাখালী, বিজয় সরণি, শাহবাগ, পল্টন, মগবাজার, তেজগাঁও, আগারগাঁও, শ্যামলীসহ বিভিন্ন স্থানে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় ছিল সশস্ত্রবাহিনীর উপস্থিতি। একান্ত প্রয়োজনে বের হলেও যে-কাউকে মুখোমুখি হতে হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির। এমন পরিস্থিতিতে দু-একটি ব্যক্তিগত যান ছাড়া রাস্তায় কোনো গাড়ি চলাচল করেনি। এমনকি দোকানপাটও খোলেননি ব্যবসায়ীরা। জননিরাপত্তার কথা ভেবে রাজধানীর কয়েকটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেন সেনা সদস্যরা। গতকাল দিনের বেশির ভাগ কারফিউর আওতামুক্ত থাকা অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি চলাচল করেছে। এদিন পেশাজীবীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখে ছাড়তে দেখা গেছে। শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া কারফিউর প্রথম ধাপ শেষ হয় গতকাল দুপুর ১২টায়। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় দুপুর ২টায়; যা আজ বেলা ৩টায় শেষ হবে। ২ ঘণ্টা শিথিল রেখে বিকাল ৫টা থেকে কারফিউ চলবে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। গতকাল রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ তথ্য জানান।

কারফিউ অমান্যে এক বছরের কারাদন্ড : জননিরাপত্তায় জারি করা কারফিউ অমান্য করলে এক বছরের কারাদন্ড ও জরিমানা করা হবে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের স্মারক মোতাবেক বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর ২৪-এর ১ ধারা অনুযায়ী ডিএমপির আওতাধীন সর্বত্র কারফিউ জারি করা হলো; যা ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং পরে ২ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে পুনরায় ২০ জুলাই (শনিবার) দুপুর ২টা থেকে আজ রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই ঘণ্টা শিথিল করে বিকাল ৫টা থেকে কারফিউ চলবে অনিদিষ্টকাল পর্যন্ত। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মানবিক প্রয়োজনে জরুরি সেবার মধ্যে আরও যা আওতামুক্ত থাকবে তা হলো- আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পৃক্ত জনবল ও যানবাহন, খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যপণ্য বহনকারী যানবাহন ও জনবল, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী জনবল ও যানবাহন। এ ছাড়া গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি এবং উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী ব্যক্তি, জ্বালানি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত জনবল ও যানবাহন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে নিয়োজিত জনবল ও যানবাহন, বিমানবন্দরে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে এয়ার টিকিটধারী ব্যক্তি, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে নিয়োজিত জনবল ও যানবাহন এবং একান্ত মানবিক প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনার বা তার মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা ইস্যুকৃত পাসধারী ব্যক্তি কারফিউর আওতামুক্ত থাকবেন। এদিকে গতকাল গণমধ্যমকর্মী যাঁরা পেশাগত কাজে বেরিয়েছেন তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করেছেন রাজধানীর এ-প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে দেখা যায় বের হওয়া যাত্রীদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। পরিচয়পত্র এবং যথাযথ কারণ দেখিয়ে জরুরি সেবায় নিয়োজিতরা যাতায়াত করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৪-এর ১ ধারা অনুযায়ী করা হয়েছে এটি আমাদের আদেশ। এর বাইরে কোথায় কতক্ষণ থাকবে সে সময় উল্লেখ করবেন ওই এলাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানে ডিসি আর মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার। তাঁরা অন্যান্য বিধিনিষেধ সেখানে তুলে ধরবেন। প্রয়োজনে মাইকিং করবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কারফিউ চলাকালে কোনো ব্যক্তি নিয়ম লঙ্ঘন করে চলাচল করলে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর ২৪-এর ১ ধারা অনুযায়ী এক বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড হতে পারে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ রয়েছে।

আজ ও আগামীকাল সাধারণ ছুটি : চলমান পরিস্থিতিতে আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার দুই দিন নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে পরিস্থিতি দুর্বৃত্তরা তৈরি করেছে সেখান থেকে জনগণকে নিরাপত্তা, আগের অবস্থায় আনা এবং জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সরকার এ সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব সরকারি-বেসরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবা চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, ডাকসেবা, ইন্টারনেট, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে। ছুটির বিষয়ে উচ্চ আদালত নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানও তাদের নিজস্ব সময় মেনে চলবে।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জনগণকে স্বস্তি দিতে এবং বর্তমানে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আরও কার্যকর করতেই এ ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে জানান জনপ্রশাসনমন্ত্রী। সামনে আরও ছুটি বাড়বে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপাতত দুই দিন দেওয়া হয়েছে। যেসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সামনে সিদ্ধান্ত নেব।

স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ : এদিকে বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। তারা বলে, এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। উচ্ছৃঙ্খল নাশকতাকারীদের হাতে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন জনমনে স্বস্তি এনে দেবে।

গণমাধ্যমসহ জরুরি পরিষেবা আওতামুক্ত : সারা দেশে চলা কারফিউর মধ্যে জরুরি সেবা হিসেবে গণমাধ্যম কারফিউর আওতামুক্ত থাকবে। কারফিউ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন এলাকায় কমিশনার এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কারফিউর সময়সীমা উল্লেখ করবেন। গতকাল ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরুরি সেবার মধ্যে যা কারফিউর আওতামুক্ত থাকবে তা হলো- আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পৃক্ত জনবল ও যানবাহন, খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যপণ্য বহনকারী যানবাহন ও জনবল, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী জনবল ও যানবাহন। এ ছাড়া অসুস্থ ব্যক্তি এবং উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী ব্যক্তি, জ্বালানি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত জনবল ও যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসে নিয়োজিত জনবল ও যানবাহন, বিমানবন্দরে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে এয়ার টিকিটধারী ব্যক্তি, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে নিয়োজিত জনবল ও যানবাহন এবং পুলিশ ইস্যুকৃত পাসধারী ব্যক্তি কারফিউর আওতামুক্ত থাকবেন। এদিকে গতকাল গণমাধ্যমকর্মী যাঁরা পেশাগত কাজে বেরিয়েছেন তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করেছেন রাজধানীর এ-প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে দেখা যায়, বের হওয়া যাত্রীদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। পরিচয়পত্র এবং যথাযথ কারণ দেখিয়ে জরুরি সেবায় নিয়োজিতরা যাতায়াত করছেন।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তি : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী ক্রমাবনতিশীল সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ রাষ্ট্রের প্রভূত ক্ষতিসাধিত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব এবং আনসার-ভিডিপি মোতায়েন করা হয়। এহেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে সরকার শুক্রবার রাত ১২টা থেকে দেশব্যাপী সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে চলমান পরিস্থিতিতে সারা দেশে কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের বিষয়টি জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সংঘাত নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের অধীনে সেনাবাহিনী কাজ করবে।

সড়কে যান চলাচল সীমিত : গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় মিরপুর-১০ গোলচত্বরে গিয়ে দেখা যায়, গোলচত্বর থেকে মিরপুর-২ নম্বরের দিকে যাওয়ার সড়কে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। মিরপুর-১৪ নম্বরের দিকের সড়কের মাথায় অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন সেনাসদস্যরা। এ পথে গোলচত্বরের দিকে যেতে চাইলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে গাড়ি এবং মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তবে মিরপুর, বনানী, গুলশান ও কুড়িলে প্রধান সড়কে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। কিছু কিছু সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলেছে। মহাখালীতে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল সীমিত করে দেন সেনাসদস্যরা। এ পথ ধরে যারা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে চেয়েছেন প্রত্যেকের পরিচয় নিশ্চিত এবং গন্তব্যে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ জানার পর তাদের গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে বিজয় সরণি থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কটি ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এ পথে কোনো ধরনের গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।

সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার : এর আগে বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কারের দাবিতে শতাধিক আন্দোলনকারী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভির প্রধান ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন। বিটিভি ভবন, প্রধান ফটকের বাইরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। পরে ভিতরে ঢুকে শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন ফুল গাছের টব ভাঙচুর চালানো হয়। এর পর থেকে বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে মহাখালীতে সেতু ভবন ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার রামপুরার হাতিরঝিলে থাকা পানি শোধনাগার, বনানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা এবং মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে একের পর এক এমন অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বলয় তৈরির জন্য সারা দেশে ৩ শতাধিক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এর পরও দেশব্যাপী ক্রমাবনতিশীল সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সারা দেশে সতর্কাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। হতাহত হয়েছেন অসংখ্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারিসহ মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বেপজা ভবন, বিআরটিএ ভবন, পিবিআই ভবন, রামপুরা টেলিফোন ভবন, কয়েকটি থানা ও পুলিশবক্সে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দিচ্ছেন। একের পর এক এমন অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

রাজধানীতে যে কোনো সহিংসতা ঠেকাতে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। ঢাকায় বঙ্গভবন, গণভবন, বেতার ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অধিদপ্তর, সাব-অফিস, থানা ভবন, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন, সারা দেশের কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে ও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থী আন্দোলন পুঁজি করে যে কোনো নৈরাজ্য কঠোর হাতে দমন করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সহিংসতায় দুর্বৃত্তরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টার্গেট করে হামলা করছে।

মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : গতকালও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীর জানমাল রক্ষায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। কারফিউর মধ্যে একান্ত প্রয়োজনে কেউ বের হলেও তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিজিবি সদস্যরা মাঠে রয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সারা দেশে পুলিশ তৎপর রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ কর্মকর্তা) মো. রুবেল হোসাইন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত গাড়িতে আগুনসহ ৭৩ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় রাজধানী ঢাকায় ৪৫ প্লাটুনসহ সারা দেশে ৮৫ প্লাটুন আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর