রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই পুলিশসহ নিহত আরও ৩১

সংঘাত অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই পুলিশসহ নিহত আরও ৩১

কারফিউ চলাকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে গুলি, টিয়ারগ্যাস, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গুলিবর্ষণ ও টিয়ারগ্যাস এবং সাউন্ড বোমা ব্যবহার করে। এসব সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই দুজন পুলিশসহ ১৭ জন রয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে পাঁচজন, ময়মনসিংহে চারজন এবং সাভারে চারজন এবং নরসিংদীতে একজন নিহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিকেটাররা এ সময় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা চালায় টঙ্গী থানায়। সিদ্ধিরগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখানে আটকে পড়া পুলিশ সদস্য, নবজাতকসহ শতাধিক মানুষকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংবাদপত্রের যানবাহনে ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গতকাল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের চেকপোস্টের মুখে পড়তে হয়েছে। তাদের বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে কারফিউ পাস নিয়ে অনেকে জরুরি কাজে বের হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ ও কাজলা এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন পিকেটাররা। তারা রায়েরবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণ করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। লাঠিসোঁটা দিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া চেষ্টা করে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্যসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের স্থানীয় হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহতরা হলেন-ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই মুক্তাদির (৫০), পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫০), ছানোয়ার ওরফে ইউসুফ (৪০), হাসান তাইয়িম (১৮), হাবিব সরদার (৩৮), জাহাঙ্গীর (৪০), রাজিব হোসেন (৩০), অজ্ঞাত (২৬) ও অজ্ঞাত (২০)। এ ছাড়া গত শুক্রবার যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত মাদরাসাছাত্র শাহরিয়ার (১৯), অজ্ঞাত দুজন গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্থানীয় এক নারী জানান, সকালে গুলির শব্দে তার ঘুম ভাঙে। তিনি ঘুম থেকে উঠে রায়েরবাগ ও শনিরআখড়ায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শুনতে পান। ভয় পেয়ে ঘরের জানালা বন্ধ করে দেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হেলিকপ্টারের টহল দেখতে পান তিনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকার দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে রাস্তার শনিরআখড়া ও রায়েরবাগ অংশে ইটপাটকেল ও গুলির খোসা পড়ে ছিল। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গতকাল সকাল থেকে রামপুরা, বনশ্রী ও বাড্ডা এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন পিকেটাররা। এ সময় তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিমেষেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বাড্ডায় পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স আনসার ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে পিকেটাররা। বনশ্রীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মায়া ইসলাম (৬০)। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন ঢামেক হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। তাদের ঢামেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বনশ্রী, বাড্ডা ও লিংক রোডের রাস্তায় ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা ও গুলির খোসা পড়ে ছিল। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সকাল থেকে ভাটারা এলাকায় ইউআইইউ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউবিসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাসে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সংঘর্ষে আবদুল্লাহ আল আবির (২৩) নামে একজন নিহত হন। আহত হন অনেকে। এর আগে গত শুক্রবার পুলিশের গুলিতে আহত আবদুল হান্নান (৩২) গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সকালে ধানমন্ডি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষে শুভ (১৬) নামে এক কিশোর নিহত হন। আজিমপুর এলাকায়ও বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে অজ্ঞাত (২৭) এক যুবক নিহত হন।

সকালে মোহাম্মদপুরের বছিলায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুর রেলগেট এলাকায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো উত্তরা এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরা সেক্টরের বিভিন্ন অলিগলির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা আজমপুরে সেক্টর-৬-এ অবস্থিত হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উত্তরার একজন বাসিন্দা বলেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। অনেকের কাজ থাকলেও ভয়ে বাসা থেকে বের হননি। 

সিদ্ধিরগঞ্জে নিহত পাঁচ : সিদ্ধিরগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই ভবনে থাকা হাইওয়ে পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে যায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ গিয়ে হেলিকপ্টারের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। এতে চারজন দুর্বৃত্ত নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- নিউ হিরাঝিল হোটেলের ম্যানেজার শাহীন (২২), সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকার রিদয় (২৫), নয়াআটি মুক্তিনগর এলাকার রুবেল (২০) ও গজারিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ছাত্র মেহেদী (২০) ও মিনারুল ইসলাম (২৫)। এ ছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক। শনিবার বিকাল ৪টায় এ ঘটনা ঘটলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে।

হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও ওই ভবনে থাকা হাসপাতাল, ব্যাংক, চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

আটকে পড়া শাবনূর বলেন, যারা আগুন দিয়েছে তারা মানুষ নয়। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই। তিনি বলেন, শুক্রবার আমার ডেলিভারি হয়েছে। আমি হাঁটতে পারছি না।

একই ভবনের তাজমহল চাইনিজ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জামাল হোসেন বলেন, শুধু আমাদের জীবন নিয়ে বেরিয়েছি। আর সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ শরফুদ্দিন বলেন, ক্যাম্পের ভিতরে আমরা অবস্থান করছিলাম। বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ করে দেখতে পাই আমাদের ভবনে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ গিয়ে হেলিকপ্টারের সহায়তায় আমাদের উদ্ধার করে। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, আগুনের লেলিহান শিখার কারণে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনলে র‌্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছি। এর মধ্যে গর্ভবতী একাধিক মা ও ৩ নবজাতক ছিল।

জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, হেলিকপ্টার দিয়ে ৩৪ জন হাইওয়ে পুলিশ সদস্যসহ আটকে পড়া শতাধিক মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি। এর মধ্যে এক দিনের নবজাতক ও মা ছিলেন, আমরা সবাইকে জীবিত উদ্ধার করেছি।

সাভারে চারজন নিহত : ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গতকাল দুপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মুরগি ব্যবসায়ী কোরবান আলী নিহত হয়েছেন। বাসস্ট্যান্ডের অদূরে গোলাগুলিতে আহত হন রনি (২৩) নামে এক যুবক। গুরুতর অবস্থায় তাকে সাভার এনাম মেডিকেলে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ দুটি ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক লোক। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৮ জন। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে এনাম মেডিকেলে। এ ছাড়া সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের গুলিতে সাদ নামে (১৭) এক মাদরাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে সন্ধ্যার পর সাভারের নামাবাজার রোডের মাথায় গোলাগুলিতে মেহেদি হাসান (২৪) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া সাভার উপজেলা পরিষদে হামলার চেষ্টা চালায় দুর্বৃৃত্তরা। পুলিশ ও বিজিবি তাদের প্রতিহত করে। পরে তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়েও হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। সাভার রেডিও কলোনিতে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২৫ জন। সেনা সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বাড়ানো হয়েছে সেনা টহল।

ময়মনসিংহে নিহত ৪ : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কলতাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৪০ জন আহত হন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহতরা হলেন- রাকিব (২৮), বিপ্লব (২২) ও যুবায়ের (২৬)। নিহতদের মধ্যে বিপ্লব স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। নিহতদের বাড়ি উপজেলার কলতাপাড়া এলাকায়। তবে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও স্থানীয় থানার ওসি সুমন রায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ছাড়াও পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়েছেন।

ময়মনসিংহের ফুলপুরে বিজিবি-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাইফুল (৪২) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। নিহত সাইফুল উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।

জানা যায়, শনিবার বেলা আড়াইটায় ফুলপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টহলরত বিজিবির একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। পরে বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পথচারী সাইফুলের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দফায় দফায় ওই এলাকায় সংঘর্ষ হয়।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ জেলার ছয়টি উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় সকাল ১০টায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে দোকানপাট খোলা থাকলেও লোকসমাগম কমে যেতে দেখা যায়। জেলাব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

নরসিংদী : শিবপুর উপজেলায় মৎস্যজীবী লীগ নেতা টিপুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের নৃশংস হামলা, ভাঙচুর ও তান্ডবের প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে ৪টায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা শিবপুর কলেজ গেট থেকে মিছিল বের করে। মিছিল শেষে ১০/১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা যাওয়ার সময় বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভকারীরা শিবপুর মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি টিপু মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন শিবপুর ওসি ফরিদ উদ্দিন।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে যানবাহন একেবারে চলছে না। শহরের ভিতরে দু-একটা ব্যাটারিচালিত হ্যালোবাইক চলছে। হোটেল রেস্তোরাঁসহ প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ। গলির ভিতরের দোকানপাটও বন্ধ ছিল।

ফরিদপুর : আজ তেমন কোনো অপ্রীতিরক ঘটনা ঘটেনি। বিজিবি টহল ছিল। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে। বেশির ভাগ দোকান-পাট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে কারফিউ জারি থাকায় কাঁচাবাজারে উল্লেখযোগ্য ভিড় দেখা গেছে। রাস্তায় কোনো দলের লোকই ছিল না। সাধারণ মানুষের উপস্থিতি একেবারে কম ছিল। জরুরি প্রয়োজনে দু-একজন ঘর থেকে বের হয়েছে। তাছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। তবে ফরিদপুর বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে যারা চিকিৎসার জন্য আসছিলেন। তারা বেশ বিপাকে পড়েছেন। গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে গন্তব্যে যেতে পারছেন না তারা।

জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও একই চিত্র দেখা গেছে।

টঙ্গী (গাজীপুর) : টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যাল কারখানায় শতাধিক আন্দোলনকারী হামলা চালান। তারা ভিতরে প্রবেশ করে কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করেন। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারসহ তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। শনিবার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, সকালে বিদ্যুৎ অফিস ডেস্কোর অফিসে হামলায় চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বেলা ১১টায় টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন এলাকায় টঙ্গী পশ্চিম থানা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। প্রায় দুপুর ১টা পর্যন্ত তারা অবস্থান করেন সেখানে। পরে খবর পেয়ে র‌্যাবের হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে পৌঁছে টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়।

এ ছাড়া টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী জোন-১-এর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ময়লার গাড়িসহ ১১টি গাড়ি পুড়িয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এসব হামলার ঘটনায় পুরো এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরে দুপুর ২টার দিকে পুরো শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা মাঠে নামেন। বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থা নেন তারা।

এর পর পরই টঙ্গীর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করতে মিছিল বের করেন।

এদিকে, শুক্রবার আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মাদারীপুর : মাদারীপুরে গত দুই দিনে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ রাস্তাঘাটে লোক-সমাগম ছিল না। এদিকে, শুক্রবার রাতে হামলা চালিয়ে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজান খানের পেট্রল পাম্প পুড়িয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এ ছাড়া শাহজান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পরিবহনের ৪৪টি বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়াও শুক্রবার রাতে মাদারীপুর সার্কিট হাউস, জেলা মহিলা সংস্থার কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা।

শুক্রবার রাতে নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই শনিবার দাফন করা হয়েছে। শনিবার দিনভর সেনাবাহিনী ও বিজিবি টহল দেওয়া রাস্তায় আন্দোলনকারীদের চোখে পড়েনি।  এ ছাড়া কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউর রহমান বলেন, সরকারি কাজে বাধাদান করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম : শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর কোথাও কোনো সংঘর্ষ, পিকেটিং ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এতে শুক্রবারের পরে নতুন করে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটনা ঘটেনি। তবে শুক্রবার রাত থেকে নাশকতার বিভিন্ন মামলায় ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

এদিন নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো সারা দিনই যানবাহন ও জনমানবশূন্য ছিল, শুধুমাত্র কয়েকটি আম্বুলেন্স ছাড়া কোথাও কোনো যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। নগরের বিভিন্ন পয়েন্ট অবস্থান নেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও নাশকতা ঠেকাতে নগরজুড়ে সারা দিনের টহল ও চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ৪৫ প্লাটুন সেনা সদস্য, দামপাড়া পুলিশ লাইনসের ১২০০ পুলিশ সদস্য, নগরীর বিভিন্ন থানার ৫০০ পুলিশ সদস্য, সাদা পোশাকে ১৫০ জন পুলিশ সদস্য ও এপিবিএনের ১৫০ জন সদস্য। এ ছাড়া র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে, এর বাইরে যেকোনো পরিস্থিতিতে টুরিস্ট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ফোর্সসহ অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুত ছিল।

নোয়াখালী : নোয়াখালীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জেলার মাঈজদী থেকে বিএনপির পাঁচ সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ। জেলায় সতর্ক যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সারা দিন জেলার প্রধান প্রধান সড়কে টহল ও নিরাপত্তা চৌকি বসাতে দেখা যায় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের।

বগুড়া : কারফিউ উপেক্ষা করে বগুড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলকারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষাভ করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে তারা শহরের সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় বিক্ষোভ করতে থাকে। বেলা ২টার সময় পুলিশ তাদের সরে যেতে বললে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়তে থাকে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবাট বুলেট নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

যানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার সকাল থেকে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় স্টেশন সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেলা ২টার সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের চলে যেতে বললে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশও টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ সড়কে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি সরে ফেলে। পরে পুলিশ সেখান থেকে চলে আসে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আন্দোলনকারীরা আবারও সেই স্থানে এসে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে থাকে। বেলা সোয়া ২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের চলে যেতে বলেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দুজন শিক্ষার্থী তাদের দাবির কথা তুলে ধরেন। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা তাদের বুঝিয়ে বলেন যে, সরকার তাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। তারা যেন আর আন্দোলন না করেন। পরে সেনাবাহিনীদের কথায় আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে চলে যান। এ ছাড়া এদিন শহরে আর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে কারফিউ জারির পর বিকাল পর্যন্ত বগুড়া শহর ছিল শান্ত। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবির সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। দুপুরে কারফিউ কিছুটা সিথিল হলে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে আসেন অনেকে। কারফিউ চলাকালীন বাস-ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। শহরে ছোট ছোট যান চলাচল করলেও বড় কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি।

বগুড়া রেলস্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু জানান, শনিবার বগুড়া থেকে বোনারপাড়া ও সান্তাহারগামী কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। সব ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারিভাবে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিরিতর সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ঢাকা-বগুড়া, রংপুর সড়কে কোনো বাস চলাচল করেনি। কারফিউয়ের পরও যারা ঘর থেকে বাইরে এসেছিলেন বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে তাদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আজ রবিবার পর্যন্ত কোনো বাস, মিনিবাস চলাচল করবে না। তবে সরকারি নির্দেশনা পেলে সব রোডে আবারও বাস চলবে। বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, কারফিউ জারির পরে শনিবার সকালে বগুড়া শহরে সেউজগাড়ী এলাকায় কিছু আন্দোলনকারী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল। পরে তারা চলে যায়। শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক সাতটি মামলায় ১১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব মামলায় আরও অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শনিবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত ২৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় জাজেস বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সদর অ্যাসিল্যান্ড অফিসে হামলা, সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও যানমালের ক্ষতিসাধন করায় পুলিশ ও অ্যাসিল্যান্ড অফিসের পক্ষ থেকে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বিএনপি-জামাতের শীর্ষ নেতাসহ কোটা সংস্কারের নামে নাশকতাকারীদের আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এসব নাশকতাকারীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বগুড়া সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, পৃথক সাতটি মামলায় ১১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

খুলনা : কারফিউ জারির পর থেকে খুলনা শহরে ও জেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কারফিউ আইন লঙ্ঘন করায় গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

শহর ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তবে গতকাল বিকাল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে টহল দিতে দেখা যায়নি। শহরের প্রবেশ দ্বারগুলোরসহ ফেরি, ট্রলার ঘাট এবং রূপসা সেতু দিয়ে যান ও পথচারী চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে কড়া পুলিশি পাহারা। শহর ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ট্রেন, লঞ্চ ও দূরপাল্লাসহ আন্তজেলার রুটগুলোতে সব ধরনের যান চলা বন্ধ রয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএল কলেজসহ অন্যান্য কলেজ ও মাদরাসাগুলোর প্রতি বিশেষ নজরদারি করছে পুলিশ। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। এ সময় কাঁচা বাজারগুলোতে ভিড় দেখা যায়। তবে সরবরাহ না থাকায় নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। খুলনা মহানগর পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গোটা শহর কড়া নজরদারিতে রয়েছে। কারফিউ আইন ভঙ্গ করায় ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

বরিশাল : নগরীর সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে পুলিশ কমিশনার মো. জিহাদুল কবির জানিয়েছেন। তিনি জানান, নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নগরীতে সেনা, বিজিবি ও র‌্যাব টহল দিচ্ছে। নগরীতে তেমন যানবাহন চলাচল নেই। দু-একটি রিকশা চলাচল করছে। নগরীর নবগ্রাম রোডে পৃথক স্থানে শিশুরা ক্রিকেট খেলছে। রাস্তার দুই পাশে নারীসহ অভিভাবকরা দৃশ্য উপভাগ করছেন।

গাজীপুর : গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ বক্সে সকাল ১০টার দিকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সময় সড়ক ভবনের ভিতরে এবং সামনে রাখা ৭টি গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া বোর্ডবাজার এবং গাজীপুরা এলাকায় পুলিশ বক্সে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশের জলকামান এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে গাছা থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ দুর্বৃত্তদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যশোর : যশোরে আজ শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচি হয়নি। মোড়ে মোড়ে পুলিশ ছিল। তবে বিকাল পর্যন্ত আর্মি নামেনি। জেলা প্রশাসন বলেছে, যশোর মোটামুটি শান্ত। তার পরও সবকিছু প্রস্তুত আছে। প্রয়োজন হলেই আর্মি নামানো হবে। কারফিউর বিরতির সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। শহরে দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করে জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে। দূরপাল্লার গাড়িসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের শিশুকুঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও বাজিতপুরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন এসিল্যান্ড ও চার পুলিশসহ শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। আজ বেলা ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের টিঅ্যান্ডটি অফিসের কাছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় এসিল্যান্ড মামুন সরকারের নেতৃত্বে একদল টহল পুলিশ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুকুন্দিয়া থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। তাদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট, কাদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ইটের আঘাতে এসিল্যান্ড মামুন সরকার ও চার পুলিশ আহত হন। আর রাবার বুলেটসহ বিভিন্নভাবে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করেছেন। এদিকে বাজিতপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে বিক্ষোভকারীরা বাজিতপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ি কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪০০ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে।

পিরোজপুর : পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলমগীর কবির মান্নু ও জামায়াতের আমির আবদুল হাইকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

রংপুর : কারফিউ জারির পর থেকেই রংপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও সর্বত্র থমথমে ভাব বিরাজ করছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিপি বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে। এর মাঝেও দুই এক জায়গায় চোরাগোপ্তা পিকেটিংয়ের খবর শোনা যাচ্ছে। শনিবার বিকালে নগরীর দর্শনা মোড়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করা হয়েছে। এর আগে রেলগেট এলাকায় পিকেটিং করা হয়। সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর পরই এসব পিকেটিং করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। শনিবার বিকালে মেরাজুল ও সাজ্জাতের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়। বাকি তিনজনেরও জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন- মিলন মিয়া, মেরাজুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, আরমান আলী ও মোয়াজ্জেম হোসেন। এরা সবাই রংপুর নগরীর বাসিন্দা। এ ছাড়া শতাধিক আহতকে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সকালে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনা পরিবার পরিকল্পনা ভবনসহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনার মামলা হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা  হচ্ছে। এর পরে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন। জেলা প্রশাসক মো. মোবাশ্বের হাসান বলেন, যারা এ ধরনের নাশকতার কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। খুব দ্রুত মামলা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সিলেট : সিলেটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। গতকাল কারফিউ শিথিলের সময় বেলা সোয়া ১টার দিকে আখালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এর আগে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত আখালিয়া, কুমারগাঁও ও মইয়ারচর এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জালালাবাদ থানা ও পুলিশ বক্সে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাউন্ড গ্রেনেডের ম্পিারের আঘাতে গুরুতর আহত হন নিউজপোর্টাল সিলেটভিউ-২৪ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার নিরেন্দু তালুকদার গুরুতর আহত হন। শুক্রবার রাতেই ওসমানী হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম কর্মকর্তা এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, থানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় জালালাবাদ থানায় তিনটি ও বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজারে সংঘর্ষ এবং সিলেট প্রধান ডাকঘরে হামলার ঘটনায় দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। জালালাবাদ থানা এলাকায় নাশকতার ঘটনায় ২১ জন ও কোতোয়ালি থানা এলাকার ঘটনায় ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে কারফিউ জারির কারণে সিলেটে গতকাল জনজীবন স্থবির ছিল। সকালে পুলিশ মাইকিং করে কারফিউ চলাকালীন জনসাধারণকে বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়। কারফিউ শিথিলের সময় দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাস্তাঘাটে কিছুটা জনসাধারণ দেখা গেছে।

এ ছাড়া পুরো দিনই রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। নগরের দোকানপাট ও মার্কেট ছিল বন্ধ। দিনভর সেনাবাহিনীকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে পুলিশকেও সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।

পঞ্চগড় : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এরপর আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিএনপি জেলা কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ একদল যুবক নাহিদুজ্জামান মুক্তা এমপির গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে তার গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে। ওই গাড়িতে থাকা এমপি মুক্তাকে পুলিশ উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। গতকাল শনিবার পঞ্চগড়ে দিনব্যাপী বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গতকাল সকাল থেকে কারফিউ উপেক্ষা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সোনা মসজিদ মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্ররা। শিক্ষার্থীদের অবরোধে মহাসড়কটিতে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। পরে দুপুর ১২টায় যৌথ বাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। দুই পক্ষের আলোচনার প্রেক্ষিতে অবরোধটি তুলে নেওয়া হয়। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কারফিউর তেমন প্রভাব পড়েনি। দোকানপাট খোলা ছিল। শহরে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করলেও ছোট ছোট যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। শহরের কোথাও কোথাও অটোরিকশার যানজট দেখা গেছে।

রাজশাহী : কারফিউ জারির পর রাজাশাহী মহানগর ছিল শান্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবির সদস্যরা টহল জোরদার করেছে। দুপুরে কারফিউ কিছুটা শিথিল হলে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে আসেন অনেকে। তবে মাঠে দেখা যায়নি কোনো বিক্ষোভ। ছিল না কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি। কারফিউ চলাকালীন বাস-ট্রেন চলাচল ছিল বন্ধ। পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন রোড়ে যে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায় সেগুলো চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারিভাবে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। রাজশাহী পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো জানান, আগের দিন অভ্যন্তরীণ রোড়ে কিছু বাস চলাচল করলেও গতকাল বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কারফিউর পরেও যারা ঘর থেকে বাইরে এসেছিলেন বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে তাদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করেছে নগরীর গলিপথগুলোতে। তবে রাজশাহী মহানগরীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।

গাইবান্ধা : কারফিউ জারির পর যৌথ বাহিনীর টহলের কারণে গতকাল শনিবার গাইবান্ধার জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। শহরের গলিতে রিকশা চলাচল করলেও জেলা শহর থেকে উপজেলায় কোনো দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। জেলাজুড়ে কোথাও রাজনৈতিক সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যসের টহলে পুরো শহরে জনজীবন ছিল শূন্য। শহরের কোথাও কোট সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের দেখা যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ছিল জোরদার।

কুড়িগ্রাম : ঢাকার বাড্ডায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহত রায়হানুল ইসলাম রায়হান (৩৫) এর লাশ গতকাল বেলা ১১টায় কুড়িগ্রামে পৌঁছে। তার গ্রামের বাড়ি জেলার উলিপুর উপজেলার পৌর শহরের মুন্সিপাড়ায় নামাজে জানাজা শেষে দুপুর ১২টায় দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিহত রায়হান উলিপুর পৌর এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে।

রায়হানের পরিবার জানায়, তিনি ঢাকার বাড্ডায় বসবাস করতেন। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় গত শুক্রবার নিজ বাসা থেকে রাস্তায় এলে ছাত্র ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় রায়হান নিহত হন।

পাবনা : পাবনায় কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশও আন্দোলনকারীদের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়লে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়। জেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ছিল জোরদার।  কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। 

মাদারীপুর : জামায়াতে ইসলামী মাদারীপুর সদর উপজেলার আমির মোখলেছুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা। এদিকে মাদারীপুরে দুই দিনে তিনজন নিহতের ঘটনায় শহর থমথমে। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ। গত রাতে নিহত দুজনের লাশ রাতেই ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর