রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আদালতে কোটা নিয়ে রায় আজ

হাই কোর্টের পুরো রায় বাতিল চাইব : অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রেখে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে। আজ রবি ও আগামীকাল সোমবার দুই দিন সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি থাকলেও আজ সকাল ১০টায় শুরু হবে আপিল বিভাগের কার্যক্রম। শুনানিতে হাই কোর্টের পুরো রায় বাতিল চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ রয়েছে। এর পর আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, আমরা আমরা হাই কোর্টের পুরো রায়টি বাতিল চাইব। কোটা সংস্কারে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব আপিল বিভাগে তুলে ধরা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা আইনজীবী। কোনো রায় সঠিক না ভুল, আমরা সে বিষয়ে শুনানি করতে পারি। রায় বা আইনের বাইরে গিয়ে আমরা কোনো প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরতে পারি না।

দেশের উ™ভূত পরিস্থিতিতে সব আদালতের সময়সূচি নির্ধারণ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের পাঠানো এক খুদে বার্তায় বলা হয়, দেশের সব আদালত চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। গতকাল রাত ৮টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, আগামী রবি ও সোমবার সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে অধস্তন আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে। তবে এই দুই দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আপিল বিভাগ ও হাই কোর্টের কার্যক্রম চলবে।

জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, রবিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করতে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনজীবীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, সাধারণ ছুটির পর নিম্ন আদলত ও ট্রাইব্যুনাল চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এসব আদালতের সংশ্লিষ্ট অফিস চলবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত। চিফ জুডিশিয়াল ও চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত থাকবেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে লিভ টু আপিল আবেদন করা হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশেষ চেম্বার জজ আদালত বসিয়ে দুই আবেদন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী রবিবার দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। পরে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে থাকা কার্যতালিকায় দেখা যায়, বিষয়টি শুনানির জন্য তিন নম্বর ক্রমে রয়েছে।

নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন হাই কোর্ট। হাই কোর্টের রায়ের পর কোটা বাতিল চেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।

এর পর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে গত ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীও আপিল বিভাগে আবেদন করে আবেদন করেন। ওইদিনই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত। পরে ১০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে বলে দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে গত ১৪ জুলাই হাই কোর্টের রায়ের ২৭ পৃষ্ঠা পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে হাই কোর্ট। ওই রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনির জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, কোটা বজায় রাখতে আদেশ দেন হাই কোর্ট।

রায়ে হাই কোর্ট আরও বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে। পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর লিভ টু আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর