রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সব দাবি মেনে নিয়েছে সরকার

আন্দোলনকারীদের আট দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানের উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম ৫% এনে সংসদে আইন পাস করাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শুক্রবার দিবাগত রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তারা। অন্যদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার সব দাবি মেনে নিয়েছে। আশাকরি উচ্চ আদালতে রায়ের মাধ্যমে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সমাধান আসবে।

শিক্ষার্থীদের  দাবিগুলো হলো- তদন্তসাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেফতার ও দ্রুত সময়ে বিচার করতে হবে। নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও পিতা-মাতার মতামতের ভিত্তিতে পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ ও ছাত্র সংসদ চালু করা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা প্রদানের দাবি জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

শুক্রবার রাতে বৈঠকে সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সহ-সমন্বয়ক হাসিব।

সমন্বয়করা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধে এবং দেশজুড়ে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসনে এসব দাবি জানানো হয়। এই আট দফা দাবির মাধ্যমে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত হলো।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটার যে পরিমাণের কথা বলেছে, তা আমরা শুনেছি। এর একটা যৌক্তিক সমাধান সম্ভব। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। বাস্তবায়ন কঠিন নয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা সংঘাত ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমাদের এই ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যদি সহিংসতা চালায় তা আমরা সমর্থন করি না। সেই দায় তাদেরই নিতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কোটা সংস্কার দাবি করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের মন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছে। সরকার সব দাবি মেনে নিয়েছে। কাল (আজ) উচ্চ আদালতে রায়ের মাধ্যমে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সমাধান আসবে। যে রায় আসবে, আশা করি শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য রায় হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি, কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করা হয়েছে। তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যই এই ব্যবস্থা করতে হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। আমরা জানি, কারফিউ জারি করার জন্য মানুষের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবগত আছেন। খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর