মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংকট মোকাবিলায় পাশে থাকবেন ব্যবসায়ীরা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের যে কোনো সংকটে ব্যবসায়ীরা আগেও পাশে ছিলেন, বর্তমানেও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা গত কয়েকদিন দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও অগ্নিকা- ঘটিয়ে যে তা-ব সৃষ্টি করেছে এর তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেন ব্যবসায়ীরা। চলমান ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকে সংগঠিত রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যাতে দেশে আর কখনো ঘটতে না পারে সেজন্য প্রতিরোধ ও প্রতিহত করারও ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদন বন্ধ থাকায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়া এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিসহ যাবতীয় বাণিজ্যিক ও ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে ইন্টারনেট সুবিধা চালুর অনুরোধ জানান। গতকাল বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেশের এ সংকট সময়ে প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ সহকারে ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্য শোনেন। এতে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির মনজুর, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না তারা সব সময় সক্রিয় ছিল। তারা বড় একটা ষড়যন্ত্র করে গত কয়েকদিন এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ধৈর্যধারণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ব্যবসায়ীদের সবাইকে ধৈর্যধারণ করতে হবে। এখানে উপস্থিত সবাই দেশের বড় ব্যবসায়ী। সবাই চিন্তা করেন, ১৪ বছর আগে আমরা কোথায় ছিলাম। আজ আমরা কোথায় আছি। আমাদের ১৫ দিন, সাত দিন, এক মাস ব্যবসা বন্ধ থাকলে ইনশা আল্লাহ কিচ্ছু হবে না। কিন্তু আমাদের এই সন্ত্রাসী জঙ্গি বাহিনীকে ধ্বংস করতে হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় আমরা কেউই আর ব্যবসায়ী হিসেবে টিকতে পারব না।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, এই সন্ত্রাসীদের টার্গেট বড় বড় ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করা, বড় বড় স্থাপনা ধ্বংস করা। মেট্রোরেল ধ্বংস করা, পদ্মা সেতু নষ্ট করা। এই ১৫ বছরে যত অর্জন সব অর্জন ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। আজ শুধু শেখ হাসিনা একা নন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ২০ কোটি মানুষ আমরা সম্পৃক্ত। আমাদের ৪০ কোটি হাত আছে। যা কিছু ক্ষয়ক্ষতি করুক এই ৪০ কোটি হাত নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেতৃত্ব দেবেন ইনশা আল্লাহ। কোনো শক্তিই আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আজকে একটি গোষ্ঠী আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। অথচ তারাও আমাদের দেশের মানুষ। এতে ব্যবসায়ীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তারা আসলে আমাদের শত্রু। তারা দেশের শত্রু। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা সবসময় আপনার সঙ্গে আছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে আপনার পাশে থাকব।

বিজেএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ চক্র সারা দেশের সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এদেশের সম্পদ ধ্বংস করা ও বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করা। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটো অনুরোধ জানান। কলকারখানা খোলা রাখার সুযোগ এবং ইন্টারনেট চালুর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানি সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অনুরোধ করব, স্বল্প পরিসরে হলেও ইন্টারনেট সুবিধা যেন চালু করা হয়।

চলমান সংঘাতকে একটি ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)’র সভাপতি ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এটা অর্গানাইজড ক্রাইম, অপরাধমূলক কার্যক্রম। এ ধরনের ঘটনাকে ঘৃণা করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নির্ভর করলে হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ব্যাংকিং খাতের এই নেতা বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞা করে গেলাম। আপনার সঙ্গে আমরা ছিলাম, আমরা আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির মনজুর বলেন, দুর্বৃত্তরা মেট্রোরেলে আঘাত করেছে। এটা আমাদের বুকে লেগেছে। এটা হতে পারে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। যারা এটা করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় ধ্বংস মনে হয় আর ঘটেনি। এই ধ্বংসাত্মক কর্মকা- যারা করেছে তদন্ত করে তাদের বিচার হতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর