মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

৭ শতাংশ কোটা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের পর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। নির্বাহী বিভাগের প্রধান প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গতকাল রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আপিল বিভাগের রায়ের আলোকেই প্রজ্ঞাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিলেন। এরপর হাই কোর্ট কোটা বহাল রাখার রায় দেন। এখন আপিল বিভাগ কোটার হার বণ্টন করে হাই কোর্টের সেই রায় বাতিল করেছেন।

এর আগে গত রবিবার কোটা নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া পূর্বের রায় বাতিল করে নতুন রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই রায়ের সময়ই সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে গেজেট বা প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চের রায়ে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় আদালত নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও রায়ে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ। বেঞ্চের অন্য ছয় বিচারপতি হলেন- বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর    সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।

রায়ে বলা হয়, যদিও কোটা নির্ধারণের বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়। এর পরও সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত এখতিয়ার বলে এবং সার্বিক ও যৌক্তিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের স্বার্থে সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮ (৪), ২৯ (১) ও ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কোটা প্রথা হিসেবে মেধা ভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করিল। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

এর আগে, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন হাই কোর্ট। হাই কোর্টের রায়ের পর কোটা বাতিল চেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে গত ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীও আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ওইদিনই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত। পরে ১০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। ৭ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে বলে দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে গত ১৪ জুলাই হাই কোর্টের রায়ের ২৭ পৃষ্ঠা পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন হাই কোর্ট। এরই মধ্যে দেশব্যাপী জোরালো হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্যে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে লিভ টু আপিল আবেদন করা হয় আপিল বিভাগে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশেষ চেম্বার জজ আদালত বসিয়ে দুই আবেদন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী রবিবার দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

সর্বশেষ খবর