মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

যৌন ও শারীরিক নির্যাতন তিন নারী সাংবাদিককে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনি একজন নারী সাংবাদিক। সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকায়। কিন্তু তিনি সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেননি। নিজেই হয়ে গেছেন সংবাদের শিরোনাম। আন্দোলনকারী নামের হায়েনার দল রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে তার ওপরে হামলে পড়ে। টেনেহিঁচড়ে গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। নিজের সম্মান বাঁচাতে নারী সাংবাদিকের সে কি আকুতি! হাতজোড় করছিলেন, বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। মানুষরূপী পশুগুলো যেন আরও উন্মত্ত হয়ে পড়ে। এই নারী সাংবাদিককে মাঝখানে রেখে চারপাশ থেকে শত শত মানুষের কিল ঘুসি আর লাত্থি। তার নাক মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল। সুযোগসন্ধানি হাতগুলো তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে যেন আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। রক্তাক্ত এই নারী তখনো নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় ছেঁড়া কাপড় নিজের শরীরে জড়িয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন। তাকে শুধু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনই করা হয়নি, তার মুখে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষ রা। এতে তার চেহারার একপাশ পুড়ে যায়। ভয়াবহ এই ঘটনাটি গত শনিবারের। দিনের আলোয় রাস্তার ওপর এমন পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের একটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক সেলিনা আক্তার সোনালী। বিকালে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকার পাসপোর্ট অফিস মোড়ে সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হন তিনি। হামলার একপর্যায়ে ওই নারী সাংবাদিককে বিবস্ত্র করা হয়। নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় ওই নারী সাংবাদিক পরনের জামাকাপড় হাত দিয়ে ধরে রাখতে গেলে হামলাকারীরা তার গালে ম্যাচলাইট দিয়ে চেহারা জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

গতকাল বিকালে যোগাযোগ করা হয় সোনালী আক্তারের সঙ্গে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালী আক্তার। তিনি বলেন, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে আমি এবং আরও দুই নারী সাংবাদিক নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড পাসপোর্ট অফিসের মোড়ে ছিলাম। এ সময় বাবুল নামে এক ব্যক্তি আমাদের জানায়, সামনে আন্দোলন চলছে ওখানে যাবেন না। কিন্তু আমি তার কথা না শুনে সেখানে যাই। ওই সময় শত শত লোক এসে আমাকে ঘিরে ধরে এবং প্রশ্ন করতে থাকে আমি কি সাংবাদিক। জবাবে বলি, আমি সাংবাদিক। কোনো ভিডিও বা ছবি তুলব না। এই কথা শেষ না হতেই শত শত লোক আমাকে কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আমার পরনের পায়জামা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত খুলে ফেলে। শরীরের জামা ছিঁড়ে ফেলে। তারা আমার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। একপর্যায়ে পরনের পায়জামা যেন খুলতে না পারে, সে জন্য দুই হাত দিয়ে পায়জামা ধরে রাস্তায় শুয়ে পড়ি। ওই সময় হামলাকারীরা আমার মুখে ম্যাচলাইট জ্বালিয়ে গাল পুড়িয়ে দেয়। আমার গাল পুড়িয়ে দিলেও আমি আমার পায়জামা হাত দিয়ে ধরে রাখি। কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালী। তিনি বলেন, ওরা আমাকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে কয়েকজন আমাকে সাহায্য করে। তাদের সহায়তায় আমি রক্ষা পাই। সাংবাদিক সোনালী অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি কাউন্সিলর ইকবালের লোকজন। তিনি অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। সুস্থ হয়ে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করবেন।

একই মারধরের শিকার অন্য দুই নারী সাংবাদিক জানান, এক পাশে সরিয়ে তাদের দুজনকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে হামলাকারীরা। এ সময় একটি হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি গতকাল এক বিবৃতিতে নারায়ণগঞ্জে তিন নারী সাংবাদিককে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা পাক বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তিনি দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সর্বশেষ খবর