বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
চার মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

সব শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেবে সরকার

দাবি পূরণ হয়েছে, এখন পড়ার টেবিলে যাওয়া উচিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর নিহতের তথ্য জানা যাবে, সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে দেশকে বিচ্ছিন্ন রাখার ষড়যন্ত্রে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেবে সরকার

সরকারি চাকরিতে কোটা বণ্টন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল এই প্রজ্ঞাপন জারির পর সরকারের চার মন্ত্রী একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন এর বিষয়বস্তু। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দাবি পূরণ হয়েছে, শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়া উচিত। শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরই শিক্ষার্থী নিহতের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে দেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন রাখার ষড়যন্ত্র করেছে।  গতকাল গুলশানে নিজের সরকারি আবাসিক অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীরা এসব কথা বলেন।  এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম মঙ্গলবার কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। তাদের এখন পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ সব ছাত্রছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার তৈরি করবে। আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার কোটা সংস্কার নিয়ে আপিল বিভাগের রায় যথাযথভাবে প্রতিপালন করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এ কমিটি কাজ শুরু করেছে। সহিংসতায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যাপারেও সরকার দেখভাল করবে। এ ছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়ে থাকলে সরকার সেগুলো সুনজরে দেখবে।

শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ সব ছাত্রছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিবেশ সরকার তৈরি করবে। সাধারণ শিক্ষার্থী যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে হতাহত হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যে আশ্বাস দিয়েছেন, সরকার সে পথেই আছে। তাই তাদের আন্দোলনের আর কোনো যুক্তি নেই। আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে এই মুহূর্তে তাদের কোনো সন্তানের সরকারি চাকরির বয়স নেই। এই সুবিধা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। তারা যে রায় দিয়েছেন, তার দাড়ি, কমা, সেমিকোলনও পরিবর্তন করিনি।

নারী কোটা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রতিপালন করেছে। নারীরাই আন্দোলনের সময় বলেছেন, তারা যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন, তাদের এই কোটার দরকার নেই। আপিল বিভাগ যদি সেটা শুনে থাকেন তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা মনে করি এবং আমরা বিশ্বাস করি কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোটার সংস্কার চাওয়া হয়েছিল, সেই আন্দোলনের মাধ্যমে যে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যে সমস্যা তৈরি করা হয়েছিল সেটা দূরীকরণ করা হয়ে গেছে।

কোটা আন্দেলনকারীরা আরও বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছে। সেসব দাবি মানা না হলে আন্দোলনকারীরা আবার আন্দোলনে যাবে, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী- এ প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, মূলত এটা ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলন কোটা সংস্কার চেয়ে। আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে আহ্বান জানাব যে, ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল সংস্কার চেয়ে। আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা বক্তব্য আছে। জনগণ মনে করে তাদের যেটা করা উচিত, সেটা হচ্ছে স্ব স্ব জায়গায় (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে) ফিরে গিয়ে পড়াশোনা শুরু করা। এটাই তাদের কাছে আমার আহ্বান।

ইতোমধ্যে কিছু নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আবেদন করার শেষ সময় ৩১ জুলাই। আজ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এসব আবেদনকারী কি এই কোটাপদ্ধতির সুবিধা পাবেন, নাকি আগের মতো করেই হবে, এ ছাড়া চলমান বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কী হবে, প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এই প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কার বলা আছে, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হইবে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছেন। সুদূরপ্রসারী। তার কারণ হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত যদি এখানে শেষ করে দিতেন, তাহলে ভবিষ্যতের প্রেক্ষিত যদি বদলাতে হতো তখন আবার রিভিউ করতে হতো। তার কারণ হচ্ছে এটা সর্বোচ্চ আদালত। রিভিউয়ের টাইমও ততদিনে চলে যেত। এ জন্য সর্বোচ্চ আদালত ভবিষ্যতের কথাই বলেছেন। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে। আদালত সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাননি। আগেও বলেছি, ভবিষ্যতে যদি কখনো সমস্যা হয় এই পলিসিটা পরিবর্তন করা বা এটা বাতিল করে দেওয়া বা এটা শেষ করে দেওয়া বা এটা আরেকটু কমানোর প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করতে পারব।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে কোটা আন্দোলন এবং সংঘাত নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার সংক্রান্ত এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা পরিষ্কার যে, এটা শুধু কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন ছিল না। এটা জঙ্গিরা, বিএনপি-জামায়াত, ইসলামি ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদলের। তারা এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছিল। তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা ঢোকানোর পরিকল্পনা বিএনপি-জামায়াত-শিবির আগে থেকেই করেছে। সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন করে বাংলাদেশকে বিশ্বযোগাযোগ্য ব্যবস্থা থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করেছে। সরকার পুনরায় ইন্টারনেট চালু করার চেষ্টা করছে। অপতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে কাজ করছে। আমার অনুরোধ থাকবে এই অপতথ্যের বিরুদ্ধে আপনারাও খবর পাঠান। আপনারাও গোটা পৃথিবীকে জানিয়ে দেন যে আসলে কী হয়েছে।

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত ও নাশকতা, সে ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কোনো ব্যর্থতা ছিল কি না- জানতে চাইলে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বেলেন, সরকার যা বলেছিল তাই হলো। সরকার বলেছিল একটু ধৈর্য ধরুন, আদালতে আছে বিচারাধীন বিষয়, এটা সমাধান হয়ে যাবে, আপনারা আশাহত হবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেছেন। তাই হলো। তাদের অধৈর্যের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসীরা ঢুকে যে কাজটি করল এটা আমরা কেউ আশা করিনি।

কোটা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এর সঠিক সংখ্যা ধার্য করা যাবে। তার আগে একটি এসেসমেন্ট করা হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে কিছু তথ্য, কিছু অপতথ্য আছে, কিছু আছে গুজব। এসব তথ্য বিভ্রাটকে ব্যবহার করে জনমনে সার্বক্ষণিক আবেগ-উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়েছে বা সেটাকে ব্যবহার করে নাশকতা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর