বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আজ সব অফিস খুলছে

♦ কারফিউ শিথিল ৭ ঘণ্টা ঢাকা ও আশপাশ জেলায় ♦ খুলছে ব্যাংক চলবে আদালত ♦ সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ সব অফিস খুলছে

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় লম্বা সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এ ছাড়া টানা তিন দিন সরকারের নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটির পর ৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সব সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস। চলবে আদালতের কার্যক্রমও। আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার কারফিউ শিথিল থাকবে ৭ ঘণ্টার জন্য। পাশাপাশি এই দুই দিন অফিস চলবে ৪ ঘণ্টা করে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে, অফিস চলবে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু হয়েছে।

গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারির পর মানুষের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিনই দুই বা তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল ছিল। তবে আজ বুধবার এবং আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল আরও জানান, কারফিউ শিথিলের এই সময় ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নরসিংদী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, অন্যান্য জেলায় কারফিউ শিথিলের সময় ওই জেলা প্রশাসন ঠিক করবেন।

এদিকে গতকাল অফিসের নতুন সময়সূচি উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই অফিস সূচি মাত্র দুই দিনের জন্য অর্থাৎ আজ এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। নতুন সূচি মোতাবেক সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে অফিস। অফিস সূচি নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, চলমান ঘটনার একটি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জনগণকে নিরাপত্তা, আগের অবস্থায় আনার জন্য এবং জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সরকার এই পদক্ষেপ হিসেবে তিন দিন সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত নেয়। এখন পরিস্থিতি বেশ ভালো। ইতোমধ্যেই কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এটার মানে হচ্ছে সবকিছু উন্নতি হচ্ছে। যার পরিপ্র্রেক্ষিতে সরকারি অফিস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সপ্তাহের বাকি দুটি দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিস চলবে। এর পর যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র শনিবার রয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী রবিবার থেকে বড় পরিসরে অফিসের কার্যক্রম চালাতে পারব। এই ৪ ঘণ্টার জন্য অফিস টাইম শুধু মাত্র দুই দিনের জন্য করা হয়েছে বলে জানান জনপ্রশাসনমন্ত্রী। এর আগে, নির্বাহী আদেশে গত শনিবার দুই দিনের সাধারণ ছুটি দিয়েছিল সরকার। যা পরবর্তীতে আরও এক দিন বাড়ানো হয়েছিল। এর ফলে রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন দিনের সাধারণ ছুটি ছিল দেশে। তবে সাধারণ ছুটির মধ্যেই জরুরি সেবাগুলো ছুটির আওতার বাইরে ছিল। অর্থাৎ বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, ডাকসেবা, ইন্টারনেট, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, চিকিৎসাসেবা, হাসপাতাল, সংবাদপত্র চালু ছিল।

এদিকে চলমান সহিংসতার কারণে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বন্ধ থাকা লেনদেন আজ থেকে চালুর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় জানায়, বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকবে ব্যাংকিং লেনদেন। আজ থেকে উচ্চ আদালতের কার্যক্রমসহ অধস্তন আদালতের কার্যক্রমও চালু থাকবে।

বের হচ্ছে কর্মজীবী মানুষ : কারফিউর চতুর্থ দিনে রাজধানীর সার্বিক পরিস্থিতি আরও উন্নতি হয়েছে। প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে মানুষের চলাচল বেড়েছে। সড়কে বেড়েছে যানচলাচল। কাজের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন কর্মজীবীরা। অনেকটা স্বস্তি নিয়ে বের হচ্ছেন তারা। অন্যান্য দিনের মতো গতকাল সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুুলিশ টহল দিয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায়। অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল রিকশা, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। নগরীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন চলতে দেখা গেছে। খুলতে দেখা গেছে বিভিন্ন আসবাবপত্রের দোকান, হোটেল, কনফেকশনারি ও জুতার শো রুম। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে বলে আশা নগরবাসীর।

আজ থেকে খুলছে ব্যাংক : আজ থেকে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক লেনদেন শুরু হচ্ছে। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকবে ব্যাংকিং লেনদেন। চলমান সহিংসতার কারণে বন্ধ থাকা ব্যাংক লেনদেন চালু করার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলমান সহিংসতার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করা জরুরি। বর্তমান দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা আগামীকাল (আজ) থেকে স্বাভাবিক লেনদেন চালু করতে হবে। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সীমিত আকারে অফিস খোলা থাকবে। তবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজ চালু রাখা যাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে। খোলা থাকছে শেয়ারবাজার। ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলবে লেনদেন।

পাঁচ দিন পর সীমিত পরিসরে চালু ইন্টারনেট সেবা : টানা পাঁচ দিন পর গতকাল সন্ধ্যায় সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। গত পাঁচ দিন ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন ছিল সারা দেশ। ইন্টারনেট না থাকায় নানা ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গতকাল দুপুরে মহাখালীর ডেটা সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ইন্টারনেট সেবা চালু হবে। সোশ্যাল মিডিয়া চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। চার দিন থেকেই আমরা চালুর বিষয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংকিংয়ের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ সময় তিনি দেশের মানুষকে গুজবে বিশ্বাস না করার জন্য আহ্বান জানান।

এদিকে ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের কারণে সারা দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল পাঁচ দিন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গতকাল থেকে সীমিত করা হয় ইন্টারনেটের গতি। চালু ছিল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। তবে ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারনেট সেবাগুলো একবারেই বন্ধ হয়ে যায়। পরে শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত ডেটা সেন্টার পরিদর্শন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ওইদিন কবে নাগাদ ইন্টারনেট চালু হতে পারে তা জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন প্রতিমন্ত্রী জানান, আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত মোবাইলের ফোর-জি সেবা ও ইন্টারনেট যাতে চালু করা যায়।

ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা না থাকায় গ্যাস-বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে পারেনি অনেকেই। এ ছাড়া ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ই-কমার্স সেবাও বন্ধ ছিল। মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ও টিকেটিং সেবা ব্যাহত হয়েছে। যোগাযোগ করতে পারেনি দেশের বাইরে থেকে কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ থাকায় তৈরি হয় বিচ্ছিন্নতা। এ ছাড়া দেখা যায়নি গণমাধ্যমের অনলাইন। বন্ধ হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার ওয়েবসাইট। কাজ করতে পারেনি প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার। ইন্টারনেট সেবা না থাকায় পুরোপুরি বন্ধ থাকে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

আদালত চলবে কারফিউ শিথিলকালীন : সকাল ৯টা থেকে দুপুর সোয়া ১টার মধ্যে যখন কারফিউ শিথিল থাকবে তখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টার মধ্যে যখন কারফিউ শিথিল থাকবে তখন বসবে হাই কোর্ট বিভাগ।

গতকাল এক খুদে বার্তায় এমন তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। খুদে বার্তায় জানানো হয়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও কারফিউ চলাকালীনে আদালতের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। অধস্তন আদালতেরও একইভাবে কারফিউ শিথিলকালীন আদালত পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ওই সময়ে আদালত বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চিফ জুডিশিয়াল ও চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত থাকবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে আদালতেও ছুটি থাকবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা।

আজ থেকে বাস চলাচল শুরু : ঢাকাসহ দেশে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হবে আজ থেকে। ঢাকায় গণপরিবহন ও দেশে আন্তজেলা বাস স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু হবে। যদিও গতকাল ঢাকায় সীমিত আকারে গণপরিবহন এবং ঢাকা চট্টগ্রাম ও ঢাকা নোয়াখালী রুটে আন্তজেলা বাস চলাচল করেছে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি সড়কে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়। এর মধ্যে অনাবিল ও গ্রিন অনাবিলসহ কয়েকটি পরিবহন রামপুরা-বাড্ডা সড়কে চলাচল করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে ঢাকা নোয়াখালী ও ঢাকা কুমিল্লা রুটে একুশে পরিবহন, আল বারাকা পরিবহনসহ কয়েকটি পরিবহনের বাস চলাচল করতে দেখা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে স্টারলাইন চলাচল করতে দেখা যায়। গতকাল থেকে সব রুটে যাত্রী পরিবহন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আগামীকাল ঢাকায় যাত্রীবাহী গণপরিবহন চলাচল করবে। আর দেশে আন্তজেলা বাস স্বাভাবিক সময়ের মতো চলাচল করবে।

সর্বশেষ খবর