শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
স্টিফেন ডুজারিক

সহিংসতার স্বচ্ছ বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চায় জাতিসংঘ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

সহিংসতার স্বচ্ছ বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চায় জাতিসংঘ

বাংলাদেশে চলমান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। বলেছে, সংলাপের পরিবেশ তৈরির জন্য সব ধরনের সহিংসতার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে হবে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গত বুধবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সংস্থার এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। প্রশ্নটি করেছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর জাতিসংঘ সংবাদদাতা লাভলু আনসার। স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে, গণগ্রেপ্তার, যে হত্যাকান্ড আমরা দেখেছি সে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত সজাগ ছিলাম। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করবে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পরিবেশ তৈরি করবে কর্র্তৃপক্ষ। কারণ এটা নাগরিকের অধিকার যে অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। সহিংসতার সব ঘটনার একটি স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিতে তদন্ত করতে হবে। জনগণকে জবাবদিহি করতে হবে, তবে সংলাপের জন্যে উপযোগী পরিবেশও তৈরি করতে হবে। প্রশ্ন ছিল, ছাত্রদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জনবিচ্ছিন্ন এবং পরিত্যক্ত রাজনৈতিক দল ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নাশকতায় লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। সোমবার বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপিত হয়। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিবের কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না জানতে চাইলে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, সত্যি বলতে, আমি যদি পেছনে ফিরে তাকাই, আমরা সাম্প্রতিক বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ দেখছি, যেসবে তরুণ সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশার প্রকাশ ঘটছে। বিশ্বে বিরাজিত পরিস্থিতি এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা হতাশ এবং তা থেকেই দেশে দেশে তুমুল বিক্ষোভ-আন্দোলন হচ্ছে। এর কিছু হচ্ছে সরকারের আচরণে এবং গৃহীত পদক্ষেপে সীমাহীন গড়িমসির কারণে। আমি মনে করি বর্তমানের আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা বৈষম্যহীন নয়, এবং তরুণ সমাজকে কষ্ট দেবে না বা প্রত্যাশার পরিপূরকভাবে কাজ করবে- তেমন প্রক্রিয়াও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর এমন অবস্থা আমরা বিশ্বব্যাপী দেখছি। তা সত্ত্বেও যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এমন বিক্ষোভ যেখানেই হোক না কেন, গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়াই, আহত বা আরও খারাপ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ভীতি ছাড়াই যেন তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার সুযোগ পায়। আরেক সংবাদদাতা (মুশফিক ফজল আনসারী) জানতে চান, বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের সরাসরি গুলির বিষয়টি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দ্বিতীয় বৃহৎ শান্তিরক্ষী জোগানদাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিশনে অংশগ্রহণে প্রভাব ফেলবে কি? জবাবে ডুজারিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি গুলি চালানোর বিষয়টিসহ বাংলাদেশে সম্প্রতি যা ঘটেছে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই পোডিয়াম থেকে জনসম্মুখে কথা বলে যেমন উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেছি তেমনি ঢাকা এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি জানানো হয়েছে। ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখার যে নীতি তা নিশ্চিতের প্রাথমিক দায়িত্বটা নিয়োগদানকারী সদস্য দেশের ওপর বর্তায়। নিয়োগের জন্য কাউকে মনোনীত করার আগে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের অতীত কোনো রেকর্ড আছে কি-না কিংবা জাতিসংঘের কোনো মিশন থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করা ওই দেশের প্রাথমিক দায়িত্ব। ডুজারিক বলেন, স্পষ্টতই এই ইস্যুতে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। মানবাধিকার নীতির শর্তগুলো পূরণ করেই যেন সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চাই।

মানবাধিকার ‘লঙ্ঘনের’ স্বচ্ছ তদন্তে  সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন : বাংলাদেশে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। গতকাল তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে এবং একটি আশ্বাস দিতে হবে যে, বিক্ষোভে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ভবিষ্যতের অপব্যবহার প্রতিরোধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং অধিকার রক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদি, ব্যাপক নিরাপত্তা খাতের সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর