কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে প্রাণহানি ঘটনার সুষ্ঠু ও মানসম্মত তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, এ ঘটনা তদন্তে ‘বিদেশি কারিগরি সহায়তা’ নেবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। সৌজন্য সাক্ষাৎকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের যে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, তাদের সুষ্ঠু ইনকোয়ারি করার জন্য বিদেশি কারিগরি সহায়তা নেওয়া হবে। যাতে তাদের ইনকোয়ারিটা খুব উচ্চমানের হয়।
তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে যোগাযোগ হয়েছে। যোগাযোগ বলতে জাতিসংঘ আগ্রহ প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশও এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছে।
জার্মান রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে নাঈমুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তারা (জার্মানি) দৃঢ় আশাবাদী যে, একটি স্বাধীন তদন্ত হবে। যারা দুর্বৃত্ত, তারা চিহ্নিত হবে এবং তাদের বিচার হবে। রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, যারা ধর্মীয় উগ্রবাদের সহযোগী তাদের ব্যাপারে জার্মানির কোনো সহানুভূতি নেই।প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকের শুরুতে জার্মান রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক সহিংসতায় জীবনহানির ঘটনায় বাংলাদেশ যে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে, তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শোক ও সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টারকে উদ্ধৃত করে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, জার্মানি বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক এবং এখনো তারা বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে। দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিদ্যমান সুসম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে জার্মানির সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং জার্মানির বেশ কিছু পরিবার বাংলাদেশের যুদ্ধশিশুকে দত্তক নিয়েছিল; প্রধানমন্ত্রী সে কথা স্মরণ করেন।
ভিসা প্রক্রিয়ার ধীরগতি প্রসঙ্গে আলাপের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, জার্মান রাষ্ট্রদূত তাদের ভিসা প্রক্রিয়ায় শ্লথতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, গুড উইলের (সুনামের) কমতির জন্য এটা হচ্ছে না। তাদের (জার্মান দূতাবাস) সক্ষমতা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে হচ্ছে।
সহিংসতায় আহতদের দেখতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল পরিদর্শন প্রধানমন্ত্রীর : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকাল ৫টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। গুরুতর আহতদের সঙ্গে কষ্ট প্রত্যক্ষ করে এবং বর্বরতার কথা শুনে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পরিদর্শনকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুর রহমান আহতদের চিকিৎসায় নেওয়া পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটর (পঙ্গু হাসপাতাল), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নেন। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক দিনে সাম্প্রতিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা পরিদর্শন করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরবর্তী কয়েকদিন সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।