বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ ব্যানারে আলটিমেটাম সুজনের ৯ দফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)-এর হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। এর মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে তারা ডিবি কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষে এ ঘোষণা দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এতে ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের মুক্তি। কারফিউ প্রত্যাহার ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ। নিহত সব মৃত্যুর সঠিক, স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি। হতাহত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহার ও বলপ্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত। হতাহত নাগরিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ। নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পূর্ণমাত্রায় খুলে দেওয়া প্রভৃতি। সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে তথাকথিত নিরাপত্তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আটকে রাখা সমন্বয়কদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ডিবি কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে তাদের যদি নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে নাগরিকদের নিয়ে ডিবি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন থেকে আরও কঠোর আন্দোলন করব।’ লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এমন বিপুলসংখ্যক হতাহতের নজির গত ১০০ বছরের ইতিহাসে আমাদের দেশে বা উপমহাদেশের অন্য কোথাও নেই। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে নিরস্ত্র আন্দোলনকারী, পানি বিতরণকারী কিশোর, পলায়নরত ছাত্র ও ছাদে খেলতে যাওয়া শিশুর মৃত্যুর যে হৃদয়বিদারক বর্ণনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে বলপ্রয়োগ ও সহিংসতার মাত্রা সব সীমা অতিক্রম করেছে। এতে সাংবিধানিক ও আইনি সব সুরক্ষা লঙ্ঘিত হয়েছে। গুলি করার ক্ষেত্রে পুলিশের আইন ভঙ্গ করা হয়েছে।’

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘১৫ বছর ধরে অনেক অন্যায়-অনাচার মুখ বুজে সহ্য করেছি। কথা বলার সময়ও অনেক আগে পার হয়ে গেছে। এখন আমাদের সন্তানদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে আমাদেরই ট্যাক্সের পয়সায় কেনা গুলি দিয়ে। বাংলাদেশের যত অভিভাবক আছেন, আজকে তাদের রুখে দাঁড়ানোর দিন।’ মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমন্বয়কদের সরকারের পাঁচটি বাহিনীর লোকজন অপারেশন চালানোর মতো করে হাসপাতালের স্টাফদের জোর করে সরিয়ে ধরে নিয়ে যায়। পরে এসে জোর করে রিলিজ অর্ডার নেয়। শিক্ষার্থীদের যারা মারল, তারা বলছে, তারা নাকি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিয়েছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে কীভাবে আমাদের ছাত্রদের মুখোমুখি হব, তা আমি জানি না। আমরা ওদের নিরাপত্তা দিতে পারি নাই।’

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহিংসতার তদন্ত ও গণগ্রেপ্তার বন্ধসহ ৯ দফা দাবি সুজনের : জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কোটা সংস্কার আন্দোলকে ঘিরে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত, নিহত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় প্রকাশ, গণগ্রেপ্তার বন্ধসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল নাগরিক সংগঠন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট এখনো নিরসন হয়নি। শিক্ষার্থীরা হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত নয়, সরকারের পক্ষ থেকে এমনটা উল্লেখ করা হলেও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৯ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে ২৪৩টি মামলা হয়েছে। সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সুজনের ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা এবং তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া। সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া।

গায়েবি মামলা ও ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পক্ষপাতদুষ্ট মামলা প্রত্যাহার ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করা থেকে বিরত থাকা। ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া। সাধারণ নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে দূরে থাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা থেকে বিরত থাকা। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে তুলে নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) বা থানায় হাজির করা থেকে বিরত থাকা। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গনসহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কারফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে বাগস্বাধীনতা নিশ্চিত করা। লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা। ক্যাম্পাসে গণরুম ও ‘গেস্টরুম কালচার’ ও র‌্যাগিং বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া। তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সব ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর