বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নানা সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কারফিউ, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ, চলমান আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল বিকালে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সাতজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- আইনমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব, বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা বিভাগের দুই সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার প্রধানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা যোগ  দেন। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। ইন্টারনেটসহ বিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। আমাদের যে অপপ্রচার হচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দেশে-বিদেশে যেন প্রচার হয় সে বিষয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রে আমাদের সঠিক খবর যেন যায় সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। ছাত্রদের আন্দোলন যারা শুরু করেন সবাই ধারণা করেছি তারা দাবি করবে, এটি একটি অহিংস আন্দোলন। তাদের দাবির প্রতি সবসময় আমাদের সহানুভূতি ছিল। ২০১৮ সালে আন্দোলনের সময় কয়েকভাবে কোটা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপর হাই কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারই আপিল করেছিল। আপিল বিভাগ একটি সুন্দর রায় দিয়েছেন। কোটা আন্দোলকারীরা যা চেয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন। এদেশের সবাই বলেছেন সুন্দর রায় পেয়েছে। আন্দোলনকারীরা এটা মেনে নিলেও আমরা দেখলাম যারা আন্দোলনকারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল তারা এটা গ্রহণ করতে পারল না। আন্দোলনকারীদের জোর করে অন্য ধরনের আওয়াজ দেওয়া শুরু করল। নানা অদ্ভুত দাবি  উত্থাপন করতে লাগল।

তিনি বলেন, ছাত্রদের নামে দ্বিতীয় লাইনে যারা ছিল তারা সামনে চলে এলো। যারা ছাত্রদের ব্যবহার করছিল সেই জামায়াত তারা সামনে চলে এলো। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বাংলা ভাই উত্থানের কথা সবার মনে আছে। সে সময় মানুষকে হত্যা করে যেভাবে লটকে রাখা হতো। সেই কায়দায় তিন পুলিশ সদস্য এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে  প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ পর্যন্ত এ আন্দোলনে ১৫০ জন মারা গেছেন। সবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এর মধ্যে পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, পথচারী, ছাত্রও রয়েছে। এজন্য শোক পালন করা হয়েছে। ছাত্র ভাইদের দাবি যেহেতু মানা হয়েছে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যারা অপরাধ করেছে তারা সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো নিরাপদ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তদন্ত কমিশনের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিশন ২১ তারিখ পর্যন্ত তদন্ত করতে পারবে। অনুসন্ধান ও তদন্তের স্কপ বেড়ে গেছে। কমিশনে এখন একজন সদস্য আমরা চিন্তাভাবনা করছি তদন্ত কমিশন তিনজন করার।

গণভবন-বিমানবন্দরে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল :  কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে গণভবন ও এয়ারপোর্টে (বিমানবন্দর) জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। এ সময় বৈঠক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কীভাবে তারা পরিকল্পনা করে জঙ্গি আক্রমণ করেছে, এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা সব বিষয় মূল্যায়ন করছি। তারা গণভবন, বিমানবন্দর হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তিনি বলেন, তারা টেলিভিশনে কেন হামলা করতে গেল? মেট্রোরেলের সঙ্গে কী সম্পর্ক কোটার? তবুও তারা কেন পুড়িয়েছে? তারা পুলিশ স্টেশনে হামলা করেছে। এর সঙ্গে কোটার কী সম্পর্ক? আরাফাত বলেন, তাদের শক্তি কতটুকু ছিল বা আছে সেগুলো মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মূলত থার্মোমিটারের মতো কতটা গরম বা ঠান্ডা আছে, তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। 

জবাব দিয়েছে টিকটক, সাড়া মেলেনি ফেসবুক ও ইউটিউব : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া চিঠির জবাবে ইমেইল পাঠিয়েছে টিকটক। তবে ইউটিউব ও ফেসবুকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। গুজব প্রতিরোধসহ কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে এসব সোশ্যাল মিডিয়াকে চিঠি দিয়েছিল বিটিআরসি। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটককে একটা সময় দেওয়া হয়েছিল। আশা করেছিলাম যে তারা লিখিত ব্যাখ্যাটা দেবে। কিন্তু এখনো তাদের লিখিত বা মৌখিক ব্যাখ্যা পাইনি। তবে টিকটক ইমেইলে একটা রিপ্লাই দিয়েছে, তারা এটা নিয়ে খুব আন্তরিক। সরকারকে সহযোগিতা করতে চান। তারা ব্যাখ্যাগুলোও দিতে চান। 

ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে : বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাই। আমরা জননিরাপত্তা এবং ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাই।

সর্বশেষ খবর