শিরোনাম
রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিক্ষোভ সংঘর্ষ হামলা উত্তাল দেশ

শ্রীপুরে একজন নিহত, কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা গুলিবিদ্ধ-৫, ফরিদপুরে রাবার বুলেট, গাজীপুর রাজশাহীতে পুলিশ বক্সে আগুন, বগুড়া রণক্ষেত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্ষোভ সংঘর্ষ হামলা উত্তাল দেশ

কুমিল্লায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলা গুলি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ-সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মো. জাকির হোসেন (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সড়ক অবরোধ করায় অনেক স্থানেই বন্ধ ছিল যোগাযোগব্যবস্থা। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এসব হামলায় অনেকেই আহত হয়েছেন। সারা দেশ থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন কর্মসূচির খবর-

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ : যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কোনো যানবাহন ঢাকা থেকে বের হতে পারেনি। ঢাকায়ও কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ছাড়েন অবরোধকারীরা। গতকাল দুপুর থেকেই সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রথম ব্যারিকেড দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর রায়েরবাগ অংশেও ব্যারিকেড দেওয়া হয়। সেখানে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় অংশে বিক্ষোভ করেন। মহাসড়কের ঢাকাগামী ও চট্টগ্রামগামী উভয় লেন বন্ধ করে রাখায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।

আরিচা মহাসড়ক অবরোধে দীর্ঘ যানজট : ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও যোগ দেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবরোধ করে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। এত ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এতে নারায়ণগঞ্জের সব প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর ২ নম্বর রেলগেট থেকে মিছিল নিয়ে চাষাঢ়ায় গিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও বিজয়স্তম্ভের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এতে নারায়ণগঞ্জ তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নেন।

গাজীপুরে পুলিশ বক্সে আগুন, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ব্যবসায়ী নিহত : গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গত রাত সাড়ে ৮টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান। তিনি জানান, মাওনা চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আন্দোলন করেন। এ সময় মাথায় আঘাত পেয়ে জাকির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। পড়ে গিয়ে বা কোনো কিছুর সঙ্গে মাথায় আঘাত পেয়ে তার মৃত্যু হতে পারে। তার নাম জাকির হোসেন (৫৫) বাড়ি সাতক্ষীরাতে। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি ওসি। এর আগে গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বেলা ১১টা থেকে আন্দোলনরত ছাত্ররা মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান নেন। এদিকে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকরা মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিলে উত্তেজনা দেখা যায়। কিছু সময় পর ছাত্ররা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল নিয়ে মাওনা ফ্লাইওভার এলাকায় যান। এ সময় ছাত্ররা পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। পরে ছাত্ররা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে ফিরে যান। এর কিছু সময় পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীরা মাওনা ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন এবং খ- খ- মিছিল বের করেন। এরপর ফের ছাত্ররা মিছিল নিয়ে মাওনা চৌরাস্তায় আসেন এবং মাওনা হাইওয়ে, গাজীপুর জেলা পুলিশ, শ্রীপুর থানা পুলিশের তিনটি বক্সে ভাঙচুর চালান এবং জেলা পুলিশ বক্সে আগুন দেন। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা আশপাশের সাঁটানো বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর করেন।

কুমিল্লায় মিছিলে হামলা, গুলি : কুমিল্লা নগরীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিলের পেছন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করে তারা। এ সময় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে। এ ছাড়াও নগরীর রানীর দিঘির দক্ষিণপাড় ও বাগিচাগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের মারধর ও গুলি করেন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী আহতের খবর পাওয়া গেছে। বাগিচাগাঁও ও পুলিশ লাইনস এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও এ সময় হকিস্টিক, লাঠি ও স্টাম্প দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে দেখা যায়।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন বলেন, আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। ছাত্রদের সঙ্গে শিবির ও বিএনপির লোকেরা একাকার হয়ে দেশকে নাশকতার দিকে নিতে চায়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন- আরফান মজুমদার (১৬), সৌরভ (২৫), মারুফ (১৬), আসিফ (১১), মৃদুল (১২), সুজন (১৩) ও সানি (১৮)।  তারা সবাই শিক্ষার্থী। গুলিবিদ্ধদের মধ্য সৌরভকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

জামালপুরে সংঘর্ষ, গুলি : ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামালপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শহরের নতুন বাইপাস মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হয়ে মির্জা আজম চত্বরে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর-মাদারগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে আন্দোলনকারীরা শহরের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেখানে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা ভেঙে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে মিছিল নিয়ে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে যান। সেখান থেকে হাইস্কুল মোড়ে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

রাজশাহীতে পুলিশ বক্স ভাঙচুর, আগুন : রাজশাহীতে তিনটি পুলিশ বক্স, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যালয় ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে আগুন এবং ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতি বিকৃত করে তারা। হামলা চালানো হয় গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপর। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নগরীর তালাইমারী হয়ে কামারুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত শোডাউন দিয়ে গতকালের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। বিক্ষোভকারীদের কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি। তারা তালাইমারী মোড়ে জমায়েতের পর বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে তালাইমারী মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। জমায়েত কিছুটা বাড়লে তারা হামলা চালান তালাইমারী পুলিশ বক্সে। মোড়ে থাকা পুলিশ বক্সটি ভাঙচুর করা হয়। এরপর সেখানে থাকা পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলামকে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

ফরিদপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : ফরিদপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

নওগাঁয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ : নওগাঁয় ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-পুলিশ সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। দুপুর ১২টার দিকে শহরের সরিষাহাটির মোড়ে এ ঘটনাটি ঘটে। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের কাজীর মোড়ে সমবেত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে প্রধান সড়ক ধরে এগিয়ে আসতে থাকে। জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এরই একপর্যায়ে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিতে সেখানে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

ইবিতে হলের নাম পরিবর্তন : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জিয়া মোড়সংলগ্ন অবস্থিত ছাত্রলীগের হল ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে দেশরত্ন মুছে দিয়ে ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা’ নাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল আন্দোলন চলাকালে ভাঙচুর এবং নাম পরিবর্তন করেন শিক্ষার্থী।

হবিগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থী। সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা বাজারে রাগীব-রাবেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সরকারের পদত্যাগ চেয়ে নানা স্লোগান দেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ : বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের আশেকপুর বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে সখীপুর উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে স্থানীয় ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রাকিব নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

বগুড়ায় রণক্ষেত্র : বগুড়ায় শহরের সাতমাথায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাতমাথার আশপাশের বঙ্গবন্ধুর চারটি ম্যুরাল ভাঙচুর ও ভুয়া লিখে দেয় এবং পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা অব্দি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকাল ৩টার দিকে বগুড়া শহরের দত্তবাড়ী, জলেশ্বরীতলা, ইয়াকুবিয়া মোড়সহ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সাতমাথায় সমবেত হতে শুরু করে। শিক্ষার্থীরা পুরো সাতমাথা ও আশপাশের প্রায় ১০০ গজ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন  স্লোগান দিতে থাকে।

বেলা সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথা থেকে নবাববাড়ী সড়কের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীরা কাগজে আগুন দিয়ে টিয়ার শেলের প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষার চেষ্টা করে এবং সাতমাথার চারপাশে বিভিন্ন স্থানে কাগজের স্তূপ বানিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এদিকে বিকাল সাড়ে ৫টার পর উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা মুজিব মঞ্চের পাশে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে, টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনের ম্যুরালে, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে ও আওয়ামী লীগ নেতা রনির পুড়িয়ে দেওয়া কক্ষের সামনের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভাঙচুর ও কালো রং দিয়ে ভুয়া লিখে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাতমাথায় অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্সেও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

বরিশালে পুলিশ বক্স ও পিকআপ ভাঙচুর : বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ সদস্যদের খাবারবাহী একটি পিকআপ ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা। নগরের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় কনস্টেবল সিফাত হাসানাত আহত হয়েছেন।

দুপুরে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা সিঅ্যান্ডবি রোড হয়ে সদর রোডের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় খাবারবাহী পিকআপ চলে আসে। শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে যাওয়ার চেষ্টা করে পিকআপ। তখন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলে চালক এএসআই ইয়াহিয়া পিকআপ রেখে পালিয়ে যান। তখন শিক্ষার্থীরা পিকআপে থাকা তিন সদস্যের ওপর হামলা করেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয়রা তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে মারকাজ মসজিদে নেন। শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর তিন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরেক দল শিক্ষার্থী চৌমাথা বাজারের বিপরীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মৃধা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করেছেন।

লালমনিরহাটে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : বৃষ্টি উপেক্ষা করে লালমনিরহাটের মিশন মোড় চত্বরে মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল : রংপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সকাল থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে। এ সময় তারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণের নিন্দা ও সরকারের সমালোচনা জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল পঞ্চগড় : বৃষ্টিতে ভিজে মুহুর্মুহু স্লোগান আর করতালিতে উত্তাল হয়ে উঠে পঞ্চগড়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে এই মিছিলে। গতকাল সকালে সদর আধুনিক হাসপাতাল এলাকায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে মহাসড়কে মিছিল নিয়ে চৌরঙ্গী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। তারা রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেন। সমাবেশে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

কুষ্টিয়ায় মিছিলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক : কুষ্টিয়া শহরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ২ কিলোমিটার অংশে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলে যোগ দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দীনসহ যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও। গতকাল কয়েক শ আন্দোলনকারী জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সাদ্দাম বাজার হয়ে চৌড়হাস মোড়ে যান। সাদ্দাম বাজার মোড় থেকে মিছিলে যোগ দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দীন। তিনি নেতা-কর্মীসহ মিছিলকারীদের সঙ্গে রওনা হন। পুলিশ কাউকে বাধা দেওয়ার বা আটকের চেষ্টা করেনি।

নরসিংদীতে অবরোধ ও বিক্ষোভ : সারা দেশে ছাত্রদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নরসিংদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হন। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে দেখা যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবরোধ-বিক্ষোভ : শিক্ষার্থীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনকারীরা শহরের বাতেন খাঁর মোড়ে জমায়েত হয়ে গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কের বিশ্বরোড নামক স্থানে অবরোধ করে অবস্থান নেয়।

সিলেটে সংঘর্ষ, আহত ২০ : ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে গতকাল সিলেটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে একত্রিত হয়। বেলা ২টায় তারা মিছিল নিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন অভিভাবকরাও। বিকাল ৫টার দিকে নগরীর আম্বরখানার দিক থেকে হাতে লাঠি হাতে কয়েক শ আন্দোলনকারী চৌহাট্টা পয়েন্টের দিকে আসেন। এ সময় চৌহাট্টা পয়েন্টে অবস্থানকারী আন্দোলনকারীরা বিশৃঙ্খলা না করতে মাইকে ঘোষণা দেন। এর মধ্যে আম্বরখানা থেকে আসা আন্দোলনকারীরা চৌহাট্টা পয়েন্টে অবস্থানরত পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মিরবক্সটুলা ও জিন্দাবাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ দুটি স্থান থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

নোয়াখালীতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর : বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে নোয়াখালীতে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এবং কিছু দুর্বৃত্ত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এ সময় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে এ অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বিকাল ৩টার শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থকরা জেলা শহর মাইজদী বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা বিকাল ৪টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর টাউন হল মোড়ে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে তারা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এরপর দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে কার্যালয়ে এক তলা ও দুই তলায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।

সর্বশেষ খবর