সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

থানায় আগুন, হত্যা ১৪ পুলিশকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা হয়েছে। কয়েক হাজার হামলাকারী থানা ঘেরাওয়ের পর ভিতরে ঢুকে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিখোঁজ রয়েছেন থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশের এরশাদ আলী নামের আরেক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া একই দিন দেশের ১৯টি থানাসহ পুলিশের ২৭ স্থাপনায় হামলা করেছেন আন্দোলনকারীরা। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের অন্তত ৩০০ সদস্য। সারা দেশে বিজিবির অর্ধশতাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, নিহতের নাম-পরিচয় ও পদবি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। বিভাগীয় অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান জানান- সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় এখন পর্যন্ত ১৩ পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে ১২ থেকে ১৪ হাজার দুষ্কৃতকারী থানা ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব দুষ্কৃতকারী হত্যার উদ্দেশে পুলিশের ওপর জঙ্গি কায়দায় হামলা চালায়। থানার আরও অনেক পুলিশ সদস্যের খোঁজ পাওয়া যায়নি। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও  পুলিশ কাজ করছে। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্র-জনতাসহ বিএনপি-জামায়াতের একটি মিছিল এনায়েতপুর থানার দক্ষিণ এলাকা থেকে এনায়েতপুর থানার দিকে আসতে থাকে। মিছিলটি থানার সামনে এলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়।  এনায়েতপুর হাট কমিটির সহ-সভাপতি মোকতার হোসেন বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ৩০০০ থেকে ৪০০০ আন্দোলনকারী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা থানা ঘেরাওয়ের পর ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ ছাদে উঠে আত্মরক্ষায় রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়লে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়। পরে তারা থানার ভিতরে ঢুকে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় একে একে সবাই থানা প্রাঙ্গণে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।’

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা : কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশের এরশাদ আলী নামের এক সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দাউদকান্দি সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদে আগুন দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ৬টি মোটরসাইকেল। পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, দুর্বৃত্তরা এরশাদ আলী নামের একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ছাড়া ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পুরাতন ভবনে আগুন দেয়। পরে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় আগুন দেয়। পুলিশের একটি প্রাইভেটকার ও রেকারে আগুন দেওয়া হয়।

২৭ স্থাপনায় হামলা ৩০০ পুলিশ আহত : সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে দিনভর সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে সারা দেশের ২৭ থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও রেঞ্জ অফিস ভাঙচুর হওয়ার তথ্য দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এই সংঘাত-সংঘর্ষে ৩ শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া হামলায় সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো তথ্য অনুসারে আক্রান্ত থানা, ফাঁড়িগুলো হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানা, টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা, বগুড়ার সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানা এবং নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি, জয়পুরহাট সদর থানা, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গংগাচড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিস, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং দিনাজপুর সদর থানা।

সর্বশেষ খবর