শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর গতকাল বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে নতুন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের উদ্দেশে মোদি বলেছেন, নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আমার শুভেচ্ছা। আমরা আশা করি (বাংলাদেশে) স্থিতিশীলতা ফিরবে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, উভয় দেশের নাগরিকের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের আকাক্সক্ষার প্রতি বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সে দেশের কর্তৃপক্ষ যে উদ্যোগ নিয়েছে ভারত তাকে স্বাগত জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল গতকাল বলেন, আমরা আশা করি, সে দেশে দ্রুত শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মুখপাত্র বলেন, নতুন সরকারের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আমাদের নীতি হলো, আমরা বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে। আরও পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করা হবে। সংখ্যালঘুদের ভারতে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। আশা করব তারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেবেন। তিনি জানান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে ভারত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয় সম্পর্কে বলেন এ বিষয়ে যে নীতি অনুসৃত হবে সেটা এখন বলার সময় নয়। অন্য যেসব নেতা এসেছেন তারা নিজ দায়িত্ব নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন। ভারত সরকার এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নেবে না। সংখ্যালঘুদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিজ নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া। এদিকে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার লন্ডন বাস নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সরকারি সূত্রে বলা হয়, হাসিনা ও রেহানা এখন ভারত সরকারের এক গোপন নিরাপদ আস্তানায় রয়েছেন। কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ কথা বলেছেন। ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নেবে, সেগুলোতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তিনি আরও বলেন, তাঁরা এরই মধ্যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সামনে কী পদক্ষেপ দেখতে চায়, তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা যেন গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কাজ করে, সেটি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশে কী ঘটছে, তার ওপর আমরা নজর রাখছি এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতা নিয়োগ দিতে দেখছি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।