রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছুটির দিনেই মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুটির দিনেই মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টারা
► অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করতে সময় প্রয়োজন : ড. সালেহউদ্দিন
 ► সরকার যতদিন দরকার থাকবে, কমও না বেশিও না : আসিফ নজরুল
► শিল্প খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স : আদিলুর রহমান

 

ছুটির দিনেই গতকাল মন্ত্রণালয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা।  কেউ কেউ বৈঠকও করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতি লাইনচ্যুত হয়নি। তবে গতি খুবই মন্থর। এটা স্বাভাবিক করতে সময়ের প্রয়োজন। আমাদের সময় দিতে হবে। এ ছাড়া এ মুহূর্তে সমগ্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরো চালুর কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারপর সংস্কারের কাজ। গতকাল সরকারি ছুটির দিনে সচিবালয়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অফিস শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ল অ্যান্ড অর্ডার বলতে শুধু রাস্তাঘাটের কথা না, এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক চালু করা, বন্দরগুলো চালু করা। এগুলো এখনই সচল করতে হবে। ‘একটা ক্রান্তিলগ্নে’ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, খুব কঠিন সময়। এখন আমাদের তাৎক্ষণিক সম্পৃক্তি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। এটা যদি ঠিক না করতে পারি তাহলে অন্যগুলো থেমে যাবে। এ কঠিন সময়ের ব্যাখ্যায় ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো,          অর্থনীতি যদি একেবারে থমকে যায় মন্থর হতে পারে কোনো কারণে, কিন্তু থমকে গেলে এটা স্টার্ট করা অনেকটা গাড়ির মতো, একবার বন্ধ হয়ে গেলে স্টার্ট করতে অনেক সময় লাগে, এনার্জি লাগে, ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে। আমরা চাচ্ছি অর্থনীতির গতি যাতে আস্তে আস্তে সচল করতে পারি। সবাইকে উজ্জীবিত করতে পারি।

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সামষ্টিক খাতে মূল্যস্ফীতি আছে, এগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে অফুরন্ত কর্মশক্তি আছে। সুতরাং আমার মনে হয় নেতৃত্ব আর ব্যবস্থাপনা থাকলে সমস্যা হবে না। দ্রুত সবকিছু সমাধান করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা একটা মসৃণ পথ করে যাব, খুব বেশিদিন তো আমাদের থাকার ইচ্ছা নেই, সে ক্ষেত্রে পরে বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যেতে পারে। আমরা সে কাজটাই করে দিতে চাই।

ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন করা হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কতগুলো প্রসিডিউর আছে। সে অনুযায়ী আমাদের এগোতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কমিশনও আমরা হয়তো করব। তবে সংস্কারের কাজগুলো আমাদের আগে করতে হবে। সব মানুষের জীবন এবং জীবিকার জন্য আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে গেছে। এটার গতিটা আমরা বাড়াব। আমরা চাচ্ছি সমতাভিত্তিক, ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে। মানুষের আয়ের সংস্থান বাড়ুক, বাজারে মূল্যস্ফীতি কমুক। কিছু কিছু লোক সিলেকটেড, তারাই খালি তোষামোদ করে। আপনারা একটু প্রো-অ্যাকটিভ হবেন। আমাদের সাজেশন দেবেন। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলাম, যখনই কিছু বলতাম বলত স্যার আমরা সব করে ফেলব। এ রকম রিঅ্যাকটিভ হলে তো কাজ হবে না। এ অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষুদ্র অর্থনীতি ছাড়াও এতদিন কিছু ভুল ছিল। উন্নয়ন কৌশল নীতির সুফল কিন্তু মানুষ পায়নি। সব মানুষের জীবন এবং জীবিকার জন্য আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরো চালুর কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারপর সংস্কারের কাজ। সংস্কারের ‘বেসিক কাজগুলো’ করতে বেশি সময় লাগবে না জানিয়ে তিনি বলেন, একটু বিচ্যুত হয়েছে, একেবারে লাইনচ্যুত হয়নি, একটু মন্থর হয়ে গেছে, এটার গতি আমরা আরও বাড়াব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি জানান, এটা প্রসিডিউরের ব্যাপার আছে, পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ করা বা তার বিষয়ে একা সিদ্ধান্ত নেব না। গভর্নরের পোস্ট একটা সেনসেটিভ পোস্ট। বাংলাদেশ ব্যাংক বা রুলস নর্মস আন্তর্জাতিক মানের জানিয়ে তিনি বলেন, যারা মানে নাই তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। টাকা পাচার বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি জানান, সেটা আমরা জানি। সেটারও প্রসেস আছে, তথ্য লাগবে। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটা করতে হবে, তা আমরা করব।

এই সরকার যতদিন থাকা দরকার থাকবে-আইন উপদেষ্টা : অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মানুষের সংস্কারের আকাক্সক্ষা ও নতুন নির্বাচনের আকাক্সক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে এই সরকার যতদিন থাকা দরকার, ততদিন থাকবে। বেশিও না, কমও না।

আইন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল ছুটির দিনে সচিবালয়ে আসেন আসিফ নজরুল। সেখানে সরকারের মেয়াদ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মেয়াদের বিষয়ে এখনো কোনো কথা হয়নি। দুটি বিষয় অন্তবর্তী সরকারের মাথায় থাকবে। একটি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা থাকবে- যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেওয়া যায়। আবার এ দেশের মানুষের যে সংস্কার-আকাক্সক্ষা, সেখান থেকে প্রত্যাশা থাকবে- এই সরকার যেন কিছু জরুরি সংস্কার করে যায়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, অতীতে দেখা গেছে পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে জনগণকে নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কিছু ভালো সেবা পাওয়া গেছে। আবার কিছু কিছু ভালো মানুষ আছেন। কিন্তু পুরো ব্যবস্থাকে এমনভাবে দাঁড় করিয়েছিল যে, ভিন্নমত পোষণকারী ও মৌলিক অধিকার চর্চাকারী মানুষের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল। তো এই সংস্কারের আকাক্সক্ষা মানুষের আছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, যে কোনো ধরনের খারাপ আইন, কোনটা সংস্কার করা প্রয়োজন, কোনটা বাতিল করা প্রয়োজন, সেটা আমরা সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আইনের শিক্ষক, আমার অনেক শিক্ষার্থী আছেন লোয়ার জুডিশিয়ারিতে, হাইয়ার জুডিশিয়ারিতে। কীভাবে ‘মিসকারেজ অব জাস্টিস’ হয়েছে, বিচারের নামে কীভাবে হয়রানি হয়েছে, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে- পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে ইনশাল্লাহ আমি জানি। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব।

শিল্প খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স- শিল্প উপদেষ্টা : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে গণ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার যে ম্যান্ডেট সেটা নিয়ে সাধ্যমতো কাজ করব। শিল্প খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের নীতি হবে জিরো টলারেন্স। একই সঙ্গে গ্যাসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাসহ চামড়া ও সার কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। আদিলুর রহমান খান বলেন, এত মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দায়িত্বে এসেছি। ফলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা সবাই একটা টিম এবং আপনারাও এর অংশ। সবাই মিলে কাজ করলে আমরা সব কিছু অতিক্রম করতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের কাছে অন্যায় অবিচারের যে অভিযোগগুলো এসেছে ভবিষ্যতে যাতে এগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্যই আমাদের দায়িত্বে আসা।

শিল্প উপদেষ্টা আরও বলেন, ক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আছে। পরিবেশবান্ধব কাজ করার বিষয়ে চেষ্টা থাকবে। সাভারের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জাহাজশিল্প নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা প্রতি দিনই বসব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সাংবাদিকরা শিল্পের কোনো বিষয়ে জোর দেওয়া হবে এবং চামড়াশিল্পে যে সংকট সেটা কাটানোর জন্য কি উদ্যোগ নেবেন- জানতে চাইলে আদিলুর রহমান খান বলেন, যেসব খাতে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষ করে আমাদের গ্যাসে সংকটের জন্য গত ছয় মাস আমাদের চারটি সার কারখানা বন্ধ ছিল। শুধু ঘোড়াশাল সার কারখানা উৎপাদনে আছে। চামড়া খাতকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। গ্যাসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, চামড়া ও সার কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর