শিরোনাম
সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইসলামী ব্যাংকের পাঁচজন গুলিবিদ্ধ

বেসরকারি ব্যাংকে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসলামী ব্যাংকের পাঁচজন গুলিবিদ্ধ

রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের সামনে গতকাল বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ, পর্ষদ পুনর্গঠন এবং চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালের দাবিতে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তা। আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ নয় দফা দাবি তুলেছেন ব্যাংকটির কর্মীরা। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে বিক্ষোভ করেছেন সাবেক পরিচালকরা। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ করেছে উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের দপ্তরে বা কার্যস্থলে আমানতকারীদের আস্থা ক্ষুণ হয় এমন কোনো কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিনই অস্থিরতা শুরু হয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকে। ৬ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেন বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ ও ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। গতকালও ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন- শফিউল্লাহ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুর রহমান, বাকিবিল্লাহ। অন্য একজনের পরিচয় জানা যায়নি। তারা বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে গতকাল দুই শতাধিক লোক ‘আইএফআইসি ব্যাংকের চাকরিচ্যুত সব কর্মকর্তাবৃন্দ’-এই ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তারা ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে শায়ান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী সব পরিচালকদের পদত্যাগ দাবি করেন। এ ছাড়াও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ এ সরোয়ারের সময়ে ‘অন্যায়ভাবে’ যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের পুনর্বহালের দাবি করা হয়। বিক্ষোভকারীরা কর্মসূচি থেকে ৯ দফা দাবি জানান। উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল মতিঝিলে লোকাল অফিসের সামনে সমাবেশ করে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পদত্যাগ করে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে উত্তরা ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান সকল প্রতিষ্ঠান জনগণের জন্য খোলা রাখার আহ্বান জানান। কিন্তু এমডি রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের আহ্বানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক বন্ধ রাখেন। রবিবারও কোনো কারণ ছাড়াই উত্তরা ব্যাংক পিএলসি কর্পোরেট শাখা একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাংক বন্ধ রাখে। এই কুচক্রী এমডি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ ও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে বিক্ষোভ করেছেন উদ্যোক্তা ও সাবেক পরিচালকদের কয়েকজন। তাদের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও যোগ দেন। এতে বাধা দেন ব্যাংকের বর্তমান মালিক পক্ষের কয়েকজন। এ সময় একজন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মহুয়া মহসীন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাংক-কোম্পানিতে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু কিছু ব্যাংকের দপ্তরে বা কার্যস্থলে ব্যাংকের শেয়ারধারক, বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কতিপয় কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোচরীভূত হয়েছে। ব্যাংকের মালিকানা সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পেশের সুনির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। অনিয়মতান্ত্রিক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এ ধরনের কার্যকলাপ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও লেনদেনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে বিধায় ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে এরূপ বিশৃঙ্খলা একান্তই অনভিপ্রেত। এতদ্প্রেক্ষিতে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের আস্থা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করা হয়। ব্যাংক-কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকের দপ্তরে বা কার্যস্থলে আমানতকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে এবং এ ধরনের কার্যকলাপ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ খবর