বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজি বন্ধ ও কারখানার নিরাপত্তা চান ব্যবসায়ীরা

সেনা কর্মকর্তার আশ্বাস

শাহেদ আলী ইরশাদ

মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি কঠোর হাতে দমন করা হবে। এ জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথমে চাঁদাবাজদের সতর্ক করা হবে। তাতে কাজ না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া শিল্প কারখানায় হামলা ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. মঈন খান ব্যবসায়ীদের এসব আশ্বাস দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ হাঁসফাঁস। কোনোভাবে লাগাম টানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের মাস জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানায় হামলা চালানো হয়েছে। চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন কারখানার মালিকের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে ব্যবসাবাণিজ্য ও শিল্প নিরাপত্তা বিষয়ক সমন্বয় সভার আয়োজন করে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এতে উপস্থিত ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ সংগঠনের সাবেক সভাপতিগণ, ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজির কারণে জিনিসপত্রের দাম কমছে না। চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে দাম কমে আসবে। শিল্প কারখানার নিরাপত্তা জোরদার, পণ্য ও সেবার সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে লজিস্টিক সাপোর্ট এবং বন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি ঠিক রাখার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে যাতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, চাঁদাবাজি বন্ধ করলে দ্রব্যমূল্য কমে আসবে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকবে। চাহিদার সঙ্গে যদি সরবরাহটা বেড়ে যায় তাহলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম কমবে। মহাসড়কে চাঁদাবাজদের তালিকা চেয়েছেন মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। এ জন্য হটলাইনও চালু করেছে সেনাবাহিনী। তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি যেটা আছে, সেটা যাতে বাধাহীনভাবে বন্দরে যেতে পারে সে বিষয়ে আমরা বলেছি, তারা আশ্বাস দিয়েছেন। যে কোনো দুর্যোগের সময় সেনাবাহিনী জনগণের পাশে ছিল, এবারও থাকবে ইনশা আল্লাহ। সেনাবাহিনীর সহায়তা জনগণ, ব্যবসায়ীসহ সবার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে আসছে। ব্যবসায়ীরা যে হতাশার মধ্যে ছিলেন সেখান থেকে ফিরে আসছেন। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশে সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা থাকলে বিনিয়োগ হবে না। এ জন্য তিনি সবার আগে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের আহ্বান জানান এবং ব্যবসায়ীরা তাদের এ কাজে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিল্পকারখানাগুলোতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা যৌথ বাহিনীর টহলের অনুরোধ জানিয়েছি। শিল্প কারখানার নিরাপত্তায় তারা মাঠে থাকবে। ব্যবসাবাণিজ্য এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা এখনো শঙ্কিত। এই শঙ্কা দূর করতে আমরা কী চাই এবং সেনাবাহিনী কী কী করছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহসাই উন্নতি হবে। এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, কোটা আন্দোলনের আগে এবং পরে স্থবির হয়ে পড়েছে আবাসন খাতের ব্যবসা। অর্থ সরবরাহ ও ব্যাংক লেনদেন স্বাভাবিক না হওয়ায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। আবাসন ব্যবসায় গতি ফেরাতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে সেটা দূর করতে হবে। অর্থব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অর্থ উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এফবিসিসিআই পরিচালক মো. রাকিবুল আলম দীপু বলেন, শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই দ্রুত সম্ভব নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

মেজর জেনারেল মো. মঈন খান বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দিতে না পারলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এ জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য ও শিল্পের নিরাপত্তা দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কর্তব্য। তাই কোনো ব্যবসায়ী কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠান চাঁদাবাজিসহ হামলার হুমকি পেলে সে বিষয়ে সেনাবাহিনীকে তথ্য প্রদানের আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া, বন্দরের কনটেইনার জট কমানো ও অন্যান্য অনিয়ম দূরীকরণে সেনাবাহিনী গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান।

সর্বশেষ খবর