শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দিনভর যা ঘটল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে গতকাল। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এ সময় তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আশপাশের এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ১৬ জনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্র-জনতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় কেউ এলেই তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন, কেন এসেছেন, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। এমনকি পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন চেক করা হচ্ছে। ৩২ নম্বর সড়কে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই এলাকায় কখনো কাউকে কাউকে ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। জটলা পাকিয়ে কাউকে মারধর করতেও দেখা গেছে। সড়কের আশপাশের এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিল ছাত্র-জনতা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও আশপাশের সড়ক থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের হাতে আটক প্রায় ৩০ জনকে উদ্ধার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশে যারা এসেছেন, তাদের মুঠোফোন চেক করেছেন অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিরা। সন্দেহ হয়েছে, এমন ১৬ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন তারা। এসব ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আটকরা সবাই কমবেশি আহত হয়েছেন। পরে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আগুনে দগ্ধ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে পৌঁছানোর আগেই বাধার সম্মুখীন হন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এ সময় তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘সেখানে অনেক উত্তেজিত লোকজন দেখলাম, ছাত্রদের দেখলাম। আমাকে বলেছে, আপনি চলে যান, আমি চলে এসেছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যখন কোনো অন্যায় কাজ বেশি হয়, তখন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাত্ররা যে বিজয় অর্জন করেছে সেটি ঐতিহাসিক বিজয়। এটাকে ধরে রাখতে হলে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দ্রুত পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি এত বছর যাবৎ আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিত, তারপরও এই আন্দোলনকারীরা যদি আমাকে তাদের শত্রু ভাবে তাহলে এটা তো আমার জন্যও দুর্ভাগ্যজনক। তারপরও বলব, দেশের মানুষের যদি স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়, জানমাল, নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় সেটিও আমার জন্য গৌরবের।’ ১৫ আগস্ট পালনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনে তা ঠেকাতে গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ৩২ নম্বরের চারপাশ দখলে নেয় ছাত্র-জনতা। তরুণদের পাশাপাশি বয়সি ব্যক্তিরাও শুক্রাবাদ মোড় থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এবং মেট্রো শপিং মলের সামনে অবস্থান নেন। একটু পর পর মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সিগন্যাল ঘুরে আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে জড়ো হন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়, ছিলেন পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরাও। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনের দুই পাশে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করেন ছাত্র-জনতা। আইডি কার্ড, মোবাইল ফোনও চেক করে সন্দেহভাজন অনেককে মারধর করা হয়। বিশেষ করে কালো পাঞ্জাবি পরা কাউকে দেখলেই তাকে চেক করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক-সংলগ্ন ট্রাফিক মোড়ে একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সকালে কয়েকজন যুবক বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটক করে ছাত্র-জনতা। পরে তাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বিপরীতে নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের সামনে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। অনেককে মারধর করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেককে সেনাবাহিনী উদ্ধার করে। কিছু লোককে মারধরের পর পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও আশপাশের সড়ক থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের হাতে আটক প্রায় ৩০ জনকে উদ্ধার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল দুপুরে ৩২ নম্বরের উল্টো পাশে শুক্রাবাদ নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। সকাল থেকে ৩২ নম্বর ও শুক্রাবাদ এলাকায় যারাই ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলছিলেন তাদের মোবাইল ফোন চেক করা হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ধরে নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে আটক রাখা হয়। এরপর সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা এসে তাদের উদ্ধার করেন।

সর্বশেষ খবর