শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
শপথ নিলেন নতুন চার উপদেষ্টা

উপদেষ্টাদের দপ্তর বদল

স্বরাষ্ট্র থেকে পাটে ব্রি. সাখাওয়াত, নতুন দায়িত্বে লে. জে. জাহাঙ্গীর, তথ্যে নাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপদেষ্টাদের দপ্তর বদল

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারে আরও চারজন উপদেষ্টা যুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের মোট সদস্য সংখ্যা ২১ জন। গতকাল বিকালে বঙ্গভবনে দরবার হলে নতুন চার উপদেষ্টাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে দেওয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এ ছাড়া বেশ কয়েকজনের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। নতুন শপথ নেওয়া ব্যক্তিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শপথের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কোরআন তেলাওয়াতের পর চার উপদেষ্টাকে প্রথমে উপদেষ্টা পদের শপথ এবং পরে গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। উপদেষ্টা পদ এবং গোপনীয়তার শপথে সই করেন নতুন চার উপদেষ্টা। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শপথ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টা, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, বিচারপতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র আইনজীবী, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে উপদেষ্টা মর্যাদা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী করা হয়েছিল আলী ইমাম মজুমদারকে। উপদেষ্টা হিসেবে শপথের পর গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে আগের নিয়োগ অবসান হয়েছে বলে জানান।  নতুন ?উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্তর্বর্তী সময়ে দ্বিতীয়বার সরকার পরিচালনায় এলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এর আগে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। আরেক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরে অবসরের আগ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মুখ্য সচিবেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রশাসন ক্যাডারের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া আলী ইমাম মজুমদার পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য তিনি। উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া ফাওজুল কবির খান ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন। ১৯৭৯ ব্যাচের এই বিসিএস কর্মকর্তা জ্বালানি ও অবকাঠামোর রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান ইডকলের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ছিলেন। ফাওজুল কবির বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সোলার হোম সিস্টেম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন। আরেক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ রাইফেলস বা তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি বিডিআর প্রধানের দায়িত্বে আসেন। তিনি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনী গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে ২০১০ সালে অবসরে যান জাহাঙ্গীর আলম। সরানো হলো সাখাওয়াতকে : অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন করে শপথ নেওয়া চার উপদেষ্টার মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয়েছে। এ ছাড়া আগে দায়িত্ব নেওয়া কিছু উপদেষ্টার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন হয়েছে। গতকাল বিকালে চারজন উপদেষ্টা শপথ নিলে রাতে এই দপ্তর পুনর্বণ্টন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এর আগে বিকাল ৪টায় শপথ নেন চার উপদেষ্টা। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন। শপথের পর রাতে দপ্তর পুনর্বণ্টন করেন প্রধান উপদেষ্টা। কয়েকটি সূত্র জানায়, গতকাল শপথ নেওয়া ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে।  আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল আগের উপদেষ্টাদের বেশ কয়েকজনের দপ্তর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে দেওয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সালেহউদ্দিন আহমেদকে পূর্বের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসিফ নজরুলকে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান  মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আদিলুর রহমানকে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; রিজওয়ানা হাসানকে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; নাহিদ ইসলামকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; আসিফ মাহমুদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; ফারুক-ই- আজমকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্ব অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানা গেছে। এর আগে তিন দফায় শপথ গ্রহণ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ উপদেষ্টা। এর মধ্যে ৮ আগস্ট শপথ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ উপদেষ্টা। ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা সেদিন শপথ নেননি। পরে অন্য উপদেষ্টারা শপথ নেন।

সর্বশেষ খবর