শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
সারজিস আলম

৩২ নম্বরে বিবস্ত্র, মারধর ও ফোন চেক করা মানবাধিকার লঙ্ঘন

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩২ নম্বরে বিবস্ত্র, মারধর ও ফোন চেক করা মানবাধিকার লঙ্ঘন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিবস্ত্র, মারধর ও ফোন চেক করার মতো যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এসবের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ জড়িত কি না তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িতদের আমাদের টিম থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। সারজিস আলম বলেন, আমরা ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয় আয়োজনে শোক দিবস পালনের পক্ষে না। তবে কেউ ব্যক্তিগতভাবে শোক প্রকাশ করতে চাইলে তাকে সম্মান জানাতে হবে। কেউ যদি ১৫ আগস্ট ধানমন্ডিতে ফুল দিতে চান তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাধা দিতে পারে না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গাড়িতে হামলার অধিকার কারও নেই। বরং আমরা যদি মনে করি, তিনি যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, যে ব্যক্তিকে তিনি অনুসরণ করেন, তিনি যদি অনুসরণযোগ্য না হন তবে আমরা তাকে বয়কট করতে পারি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাইরের রাষ্ট্রে থেকে সে রাষ্ট্রের মদতে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদি এ বিপ্লব হয়েই যেত তাহলে তা ছাত্র-জনতার বিপক্ষে গিয়েই হতো। ১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ছদ্মবেশে বিতর্কিত কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। তারা যেন প্রতিবিপ্লব করতে না পারে সেজন্যই আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট আমরা এমন বেশ কিছু চিত্র দেখেছি, আমার বাবার বয়সি একজনকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে, আমার বাবার বয়সি একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে এবং লোকজন যাচ্ছেতাই বলেছে, অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে, আমার মায়ের বয়সি একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে এবং সাংবাদিক ভাইবোনদের ওপর হামলার বিভিন্ন ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। গত ১৬ বছরেও অসংখ্য এ রকম ঘটনা ঘটেছে, এগুলো থেকে মুক্তির জন্য আমাদের গণ অভ্যুত্থান। সারজিস আলম বলেন, অথচ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছি, যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, মত প্রকাশ করতে পারবে, যিনি যে ধারায় বিশ্বাসী, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। কিন্তু ১৫ আগস্ট যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ সমন্বয়ক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফরমের সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করেছি। আমরা খুঁজছি এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক যুক্ত আছেন কি না। পুরো বাংলাদেশে এসব ঘটনার সঙ্গে একজন সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের যুক্ততা পাওয়া গেলে, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের টিম থেকে বহিষ্কার করব, এটি আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে আইনগত সহযোগিতা করার জন্য যা করা প্রয়োজন সে কাজটিও করবে। আমাদের যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন, তাদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায়, আমরা সে কাজটি করব। সারজিস আলম বলেন, যেখানে যখন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম আসবে, তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ছাত্রসমাজকে সেখান থেকে সরে যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসে ফিরে যেতে হবে। এটি আমাদের সুস্পষ্ট বার্তা। তিনি বলেন, কেউ একজন কোনো একটি হোস্টেলে গিয়ে সার্চ করবে, কোনো একটি আবাসিক হোটেলে যাবে, কোনো একজন অধ্যাপককে জোর করে নামিয়ে দেবে আমরা এগুলো সমর্থন করি না। আমরা কোনো অথরিটি নই। আমরা একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে দুর্নীতিবাজ বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের অপসারণের জন্য দাবি তুলতে পারি, কিন্তু এটি করতে বাধ্য করতে পারি না। বিশাল একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ভুয়া সমন্বয়ক-সহসমন্বয়ক বা ভুয়া আন্দোলনকারী হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে সারজিস আরও বলেন, আমরা এমন খবরও পেয়েছি যে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে নাকি একটি কমিটি হয়েছে, যারা মসজিদে গিয়ে মসজিদ কমিটিকে পদত্যাগ করতে বলেছে। অথচ আমরা আমাদের জায়গা থেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটি দিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য এবং কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এ মানুষগুলো এমন কিছু কাজ করছে যা অপ্রত্যাশিত। অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আসার পর আমরা এ প্ল্যাটফরমটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

সর্বশেষ খবর