শিরোনাম
সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বহুল আলোচিত নতুন শিক্ষাক্রম গুটিয়ে নিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার বার্তা দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অন্তর্বর্তী সরকারে শপথ নেওয়ার পর তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় জানিয়ে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা অস্বস্তিতে পড়েন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।

গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একটা নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল ২০২১ সালে। এতদিন ধরে মাঠপর্যায়ে সব জায়গায় এগুলো নিয়ে গবেষণার তথ্য তৈরি হয়েছে। আমার কাছে আছে। পাঠ্যক্রম তো উন্নত করতেই হবে। সময় বদলাচ্ছে, কিন্তু যেটা তৈরি করা হয়েছে বর্তমান পর্যায়ে আমাদের যে শিক্ষক আছেন তা দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। উপদেষ্টা বলেন, এটা আমাদের দেশের জন্য সর্বক্ষেত্রে উপযোগী তাও মনে করছি না। নতুন শিক্ষাক্রমকে খুব সম্ভবত কার্যকর করা সম্ভব বলে আমি দেখছি না। এটার বাস্তবায়ন তো খুব ভালোও হচ্ছে না। বিশেষ করে পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে। আমরা যাই করি না কেন, এই সাময়িক সময়ে আমরা আগের যে শিক্ষাক্রম, সেখানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু এমনভাবে করব যারা এরই মধ্যে ঢুকে গেছে, তাদের যেন কোনো অস্বস্তি না হয়। শিক্ষকদের যেন অস্বস্তি বোধ না হয়। তিনি বলেন, যে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সেটাকে তো রাখা যাবে না। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগেরটাতে ফিরে যাব ধাপে ধাপে। এমনভাবে যাব যেন ডিসকন্টিনিউটি না হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি না হয়। তবে কীভাবে যাব সেটি একটি ফর্মুলার বিষয়। বিষয়টি জটিল। শিক্ষায় বেহাল অবস্থা চলছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য। সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে হবে। এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগও। আমরা চাইব সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী এবং যোগ্য ব্যক্তি যেন আসে। এখানে এতদিন ধরে বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক এটাও রাজনীতিকরণ, দলীয়করণ করা হয়েছে। এখানে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমরা এখানে এসেছি। অনেক বড় বড় পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে শৃঙ্খলার সঙ্গে আমরা যেন আবার ওই পরিবেশটা ফিরিয়ে আনতে পারি। সেটা যেন নিয়মমাফিক হয়, আমরা সেই চেষ্টা করব। শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এ উপদেষ্টা বলেন, এখানে যে দখলদারিত্বের রাজনীতি, চলে গেল, আবার দখল হবে, সেটার মধ্যবর্তী সময় আমরা চেষ্টা করব যেন একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যান্য দেশে চলে, তেমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে। আমাদের স্কুল-কলেজের যে বোর্ডগুলো রয়েছে, সেগুলোতে প্রচ- দলীয়করণ হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান যিনি তিনিই হয়তো এসএসসি পাস নন। এটা নিয়ে কী করা যায়। এখানে দখলদারির বিষয়, এদের সরিয়ে অন্য দল আসবে একই ধরনের, এটা আমরা চাই না। আমরা চাই স্কুল-কলেজগুলোর কমিটি ভালো মানুষদের দিয়ে গঠিত হতে পারে। সেটা যদি এখনই সম্ভব না হয়, বিকল্প কী হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি সামনে রেখে তথ্যপ্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার প্রসারে ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় সৃজনশীল পদ্ধতি, পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর পরীক্ষা ও মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়। ওই বছর দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয় নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর চলতি বছর তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম এবং নবম শ্রেণি যুক্ত হয় নতুন শিক্ষাক্রমের তালিকায়। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়াসহ এক গুচ্ছ পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর