নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন নারী সংগঠন ও নারী নেতৃত্ব। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তারা এ দাবি জানান। এ সময় নারী নেতারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করারও সুপারিশ জানান।
বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নারী নেতাদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, নারীপক্ষর শিরিন হক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খানম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার প্রমুখ। নারীবাদী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সমন্বয়কদের মধ্য থেকেও দুজন নারী উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। বৈঠক শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, নারীদের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ ও দাবি উঠে এসেছে, প্রধান উপদেষ্টা সেসব বিষয়ের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। তিনি এসব সুপারিশের মধ্য থেকে বেছে কিছু অগ্রাধিকারমূলক সুপারিশের তালিকা করে তা জমা দিতে বলেছেন নারী নেতাদের। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, নারী নেতাদের প্রথম সুপারিশ ছিল এটি। তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ আছে। আমরা একটা ফাউন্ডেশন সৃষ্টির মাধ্যমে আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ সবকিছু করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেহেতু ফাউন্ডেশন করতে একটু সময় লাগবে, সে কারণে দাবি উঠেছে অন্তর্বর্তী সময়ে কিছু করা, যাতে যাদের চিকিৎসার জন্য টাকা প্রয়োজন, তারা যেন দ্রুত টাকা পেতে পারে।
মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এর পাশাপাশি ৪৫টি মন্ত্রণালয়ে তাদের যে তদারকির ব্যবস্থা আছে, সেটি তারা করছে না। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় যেন সেই তদারকি ঠিকমতো করে, সেই সুপারিশ এসেছে নারীদের পক্ষ থেকে। রিজওয়ানা হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক অনেক আইন আছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। যেমন- উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমান অধিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। পারিবারিক ক্ষেত্রে, অভিভাবক ও নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যে আইনগুলো আছে, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ ‘সিডও’-এর রিজার্ভেশন প্রত্যাহারের পাশাপাশি আইএলও-এর ১৯০ অনুচ্ছেদের পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনগুলোতে বাংলাদেশ যাতে দ্রুত অনুসমর্থন দেয় তার দাবিও জানিয়েছেন নারী নেতারা। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নারী সমন্বয়কের বরাত দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ চেয়ে ওই সমন্বয়ক বলেছেন, তার গায়েও অনেক আঘাতের দাগ আছে, যা বিদায়ী সরকারের ছাত্র সংগঠনের দেওয়া। তিনি সেই আঘাতের দাগ নিয়ে কথা বলতে চান না। তিনি বলছেন, এই পুরো সিস্টেমটা বদলাতে হবে। যেখানে নারীকে আঘাত দিয়ে পার পাওয়া যাবে না- এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রিজওয়ানা বলেন, নারীকে শুধু তার অধিকার সম্পর্কে জানালে হবে না। সমাজকে নারীবান্ধব করে ওই শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বৈঠকে কল্পনা চাকমাসহ যেসব নারী গুম বা হত্যার শিকার হয়েছেন, সেসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান নারী নেতারা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় আদালত ও বিচারব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জুডিশিয়ারি কমিশন গঠনেরও দাবি তোলেন নারী নেতারা। কোনো সরকার যেন এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার ওপর কোনো ধরনের হয়রানি না করতে পারে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেন এনজিও সংগঠকরা। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে সংস্কৃতি বোঝেন- এমন ব্যক্তিদের নিয়োগের সুপারিশ ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি চিনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বম সম্প্রদায়ের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তা নিরসনের সুপারিশ জানান নারীবাদী সংগঠনগুলোর নেতারা। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেখানকার আদি বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সে বিষয়েও গুরুত্ব দেন নারী নেতারা।