শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ারের মালিক এস আলম গ্রুপ হওয়ায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করা হবে। পরবর্তীতে যারা ২ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক তারা চাইলে পর্ষদে যুক্ত হতে পারবেন। তবে পর্ষদে যুক্ত হতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে গর্ভনর আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের দায় দেনার বিপরীতে গ্রুপটির শেয়ার আইন অনুযায়ী সরকারিভাবে ‘টেকওভার’ করা হবে। তারা যদি পুরো টাকা পরিশোধ করে দেয়, তাহলে মালিকানা ফেরত পেতেও পারে। কিন্তু আমার তো মনে হয় না পারবে। কারণ লুট যা করার তা হয়ে গেছে। যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকুই উদ্ধারের চেষ্টা করব। আহসান এইচ মনসুর বলেন, যদি কারও ২ শতাংশ শেয়ার থাকে তার পর্ষদে বসার অধিকার আছে। এর চেয়ে কম শেয়ার থাকলে আমরা পর্ষদে দিতে পারব না। এই মুহূর্তে আগের মালিকদের কারও কাছে ২ শতাংশ শেয়ার নাই। কাজেই ওনারা পর্ষদে আসতে পারছেন না। ভবিষ্যতে যদি শেয়ার ক্রয় করেন তাহলে পর্ষদে আসতে পারবেন। তবে যদি কোনো কোম্পানি ২ শতাংশ শেয়ার কেনে তাহলে আমরা তাদের কার্যক্রম, আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পর্ষদে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আরও বলেন, আমরা এখন সরকারিভাবে খুব শিগগিরই ছোট আকারে ইসলামী ব্যাংকে একটি পর্ষদ গঠন করে দেব। পরবর্তীতে যারা শেয়ার নিয়ে আসতে পারবেন, তাদের কাছে আমরা হস্তান্তর করব। সেটা শুধু আগের মালিকদের জন্য হবে এমন না- এটা সবার জন্য প্রযোজ্য। তিনি বলেন, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রথমে ইসলামী ব্যাংকের জন্য নেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলোরও লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে, আস্তে আস্তে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। এ সময় তিনি জানান, শেয়ার হস্তান্তর এবং ঋণ বিতরণ করতে পারছে না তারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক সেটা আমরা চাই না। অযৌক্তিক কোনো দাবি মানা আমার পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব; কিন্তু অযৌক্তিক চাপের কাছে সাইন করে বের হয়ে যাব- সেটা হবে না। ওই সাইনের সঙ্গে আমার পদত্যাগপত্র একসঙ্গে যাবে। আমি চাইব সামনের দিনে কোনো ধরনের অপকর্মের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন না যায়। গভর্নর বলেন, এস আলম গ্রুপের অর্থ পাচার তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তদন্ত করবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিভিন্ন ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেওয়া হবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা এক দিনের ব্যাপার নয়। আমি এসেই বড় রকমের নাড়াচাড়া দিতেও চাই না। কারণ, আমাদের হাতে অনেক কাজ। আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা। বাংলাদেশ যেন খেলাপি না হয়, সে জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, আমরা যেন অবনমিত না হই, সহযোগী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যেন আমরা সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারি, এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।