শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

আকস্মিক বন্যা নিয়ে প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার

ত্রিপুরার বন্যা অনাকাঙ্ক্ষিত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বেড়ে গেছে : প্রণয় ভার্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আকস্মিক বন্যা নিয়ে প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সাক্ষাৎ -পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার কারণ জানতে চান। জবাবে হাইকমিশনার জানান, ত্রিপুরার বন্যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে দুই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বেড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রণয় ভার্মা। বৈঠকে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার কথা বলেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার। গতকাল বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করেন ঢাকাস্থ ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে প্রণয় ভার্মা জানান, ত্রিপুরায় বন্যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। অনেক উঁচু হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাঁধটি খুলে যায়। এই বন্যায় দুই দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, তাদের ওখানেও প্রায় ৫০ হাজারের মতো লোক স্থানান্তরিত হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সময় সময় উচ্চপর্যায়ের সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বলেও জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, তার দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বন্যা নিয়েও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ঢাকায় অবস্থিত হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রণয় ভার্মা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রেস সচিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট হচ্ছে, যা দুঃখজনক বলে ভারতীয় হাইকমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই উদ্বেগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনারকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ একটি বড় পরিবার। আমরা সবাই ভাইবোন। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে আছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে প্রধান উপদেষ্টা আগেই বলেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কিছু অতিরঞ্জিত রিপোর্ট ছিল। তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের ঢাকায় এসে এ বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে বন্যার জন্য ত্রিপুরার বাঁধ দায়ী নয়-ভারত : ভারত বলেছে, বাংলাদেশে বন্যার জন্য ত্রিপুরার বাঁধ দায়ী নয়। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে গতকাল বলা হয়, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীতে ডুম্বুর বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণেই নাকি বাংলাদেশে বন্যা হয়েছে, সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তা আমাদের নজরে পড়েছে। কিন্তু এটা সঠিক তথ্য নয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর পাশের এলাকাগুলোয় কয়েক দিন ধরেই ভারী বর্ষণ হচ্ছে। মূলত বাঁধের নিচের দিকে পানিপ্রবাহের কারণেই বাংলাদেশে এ বন্যা হয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ডুম্বুর বাঁধ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে বহু দূরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। এটি একটি নিম্ন-উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশও ত্রিপুরার এ বাঁধ থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে থাকে।

জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পর থেকে ভারতে গোমতী নদী যে ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়, সেখান দিয়ে তিনটি পর্যবেক্ষণস্থল আছে-অমরপুর, সোনমুড়া এবং সোনামুড়া-২। গত ২১ আগস্ট এ অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এর জেরে গোটা ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সংলগ্ন জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অমরপুর স্টেশনটি একটি দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের অংশ, যার অধীনে আমরা বন্যা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে জানাচ্ছি।’

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদীতে বন্যা একটি যৌথ সমস্যা যা উভয় পক্ষের মানুষের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানের জন্য ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন। যেহেতু দুটি দেশ ৫৪টি অভিন্ন আন্তসীমান্ত নদী ভাগ করছে, তাই নদীর পানি সহযোগিতা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানিসম্পদ এবং নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগ সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত ভারতের ত্রিপুরা। ইতোমধ্যে রাজ্যটিতে বৃষ্টিপাতের কারণে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যার জেরে কয়েক লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এ আবহে বাংলাদেশি নেটিজেনদের একটা অংশের অভিযোগ, ভারত নাকি ইচ্ছে করেই বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

সর্বশেষ খবর