শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

উজানের পানি প্রধান কারণ

♦ আগাম সতর্কতা না দিয়ে অসহযোগিতা করেছে ভারত ♦ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ♦ ব্যবসায়ীদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত থেকে উজানের পানি ধেয়ে আসার কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে। আগাম সতর্কতা না দিয়ে ত্রিপুরার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশে পূর্বাঞ্চলে যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় গুরুত্বের সঙ্গে তা উঠে আসে। পুরো বিষয়টিকে ভারতের অসহযোগিতা ও অমানবিক আচরণ বলে মনে করছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ দিকে বৈঠকে দেশের দুর্যোগময় এই পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমন্বিত কার্যক্রমের আহ্বান জানানো হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম সামলাতে তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের এসব আলোচনার বিষয় তুলে ধরেন তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ব্রিফিংয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, উজানের পানি বাংলাদেশে ধেয়ে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। বিষয়টিকে বাংলাদেশের জনবিরোধী ভারতীয় নীতি হিসেবে উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত এ ধরনের নীতি থেকে সরে আসবে। একই সঙ্গে দুই দেশের জনগণকে কীভাবে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের পথ খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ভারতের এই নীতি নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন করছে। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিতরে কোনো টানাপোড়েন থাকবে না এমন আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা আরও বলেন, একটা ন্যায্যতার ভিত্তিতে যেন ভারত-বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের প্রতিস্থাপন করা হয়।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, গণ অভ্যুত্থানে যেভাবে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, আমরা একইভাবে দেশের সব সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় শক্তিকে আহ্বান জানিয়েছি, যাতে আমরা একত্রে এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি। বন্যার্তদের দুর্ভোগ লাঘবে আমরা সরকারি-বেসরকারি প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি এগিয়ে আসার জন্য। তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে, কীভাবে আরও দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

বন্যার্ত মানুষের পাশে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ আহ্বান হচ্ছে, যাতে তারা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে আসে এবং সরকারকে সহযোগিতা করে।

আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়া সমাধানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিটি : ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আমরা জাতীয়ভাবে একটি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সরকার মাত্র পনেরো দিন হলো গঠন হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বিভিন্ন দাবি উত্থাপণের সুযোগ পাচ্ছিল না। সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে যে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি আদায়ে আন্দোলন সবাই করবেন। আমরা সবার দাবি শুনব। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এই দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো শুনবেন। সুষ্ঠু উপায়ে যাতে আমরা দাবিগুলো শুনে সমাধান করতে পারি সে জন্য তিনি সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।

উপকূলে মাছধরা বিদেশি জাহাজ ঢুকতে মানা : বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে বিদেশি অনুপ্রবেশকারী বা কোনো মাছধরা বিদেশি ট্রলার যাতে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক থাকার জন্য কোস্টগার্ডকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের উপকূলে অনেক বিদেশি মাছ ধরার জাহাজ ঢুকে পড়ে।

প্রকল্পের নামকরণে নীতিমালা : প্রকল্পের নামকরণে বিষয়ে একটি নীতিমালা করার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, পট পরিবর্তনের সঙ্গে নাম পরিবর্তন নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সেটা যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে পাবলিক রিসোর্স অর্থাৎ জনগণের টাকায় যে প্রকল্প হবে, সেই প্রকল্পের নামকরণ হবে জনগণের ইচ্ছায়। আগে যেসব প্রকল্পের নামকরণ হয়েছে সেগুলোর পরিবর্তন হবে কি-না সে বিষয়ে নীতিমালা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর