ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং ত্রিপুরায় বাঁধ খুলে দেওয়ায় প্লাবিত হয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১০ জেলা। এসব জেলার প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সতর্কতা ছাড়াই বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল ভারতবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, জগন্নাথ, বরিশাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ভারতীয় আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী প্লাবিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে, এর ৩০টিতে তারা বাঁধ দিয়েছে। আধিপত্যবাদী ভারত গ্রীষ্ম মৌসুমে বাঁধ বন্ধ করে রাখে। আমার দেশের কৃষক পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারে না। আবার বর্ষা মৌসুমে বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারে। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, প্রভুত্ব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : বুধবার রাতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ বরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ সমাবেশ হয়। এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দেন। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে এসে কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ভারত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শহীদ আবরার আওয়াজ তুলেছিল। তাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার হাতে জীবন দিতে হয়েছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ভোট চোর আওয়ামী লীগ দিল্লিকে প্রভু বানিয়েছিল। এখন সরকার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র-জনতার সরকার। দিল্লি আপনার আধিপত্য-আগ্রাসন ভুলে যান।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বুধবার রাতে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বটতলায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব সংকেত ছাড়াই ডুম্বুর গেট খুলে দিয়ে আমাদের ফেনী, কুমিল্লাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর মানুষের ওপর জুলুম করা হয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে, তার সবই অসম চুক্তি। তিস্তার পানি বণ্টন কিংবা টিপাইবাঁধের কথা কিন্তু আমরা ভুলিনি। যদি বাংলাদেশের ওপর এভাবে জুলুম করা বন্ধ না হয়, তাহলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার যে পথে গেছে, আমরা মোদি সরকারকেও সেই পথে যেতে বাধ্য করব।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বুধবার মধ্য রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে এসে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, নিজের অধিকার ছাড় দিয়ে ভারতের কোনো অধিকার আমি স্বীকার করি না।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবনের সামনে থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বন্যায় যদি মানুষ মরে, সেভেন সিস্টার থাকবে নারে’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’ নানা স্লোগান দেন। এ ছাড়া ভারতে অবৈধ বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে কৃত্রিম বন্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রতিবাদে মেহেরপুর, ভোলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা, ঝিনাইদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।