শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

পূর্বাভাস নিয়ে প্রশ্ন, দায় কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগজুড়ে প্রবল বর্ষণ ও ভয়াবহ বন্যার কোনো পূর্বাভাস ছিল না। ১৮ আগস্ট দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে শুধু নদনদীর পানি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। ভারতের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকেও এমন কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়েছে। ফলে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের পূর্বাঞ্চল। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) সেখানে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা এবং ত্রিপুরায় রেড অ্যালার্ট জারি করলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর এমন কোনো সতর্কতা জানাতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় কার- সেই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌথ নদী কমিশনের পাঁচটি দায়িত্বের অন্যতম হচ্ছে বন্যার পূর্বাভাস সঠিকভাবে দেওয়া। ভারত ও বাংলাদেশের ৫৪টি যৌথ নদীর পানি ও বন্যার তথ্যবিনিময় সঠিকভাবে করা গেলে এবং বন্যার পূর্বাভাস মানুষের বোধগম্যভাবে উপস্থাপন করা গেলে এত বড় বিপর্যয় হতো না। দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার উদয় রায়হান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, গোমতী ও মাতামুহুরী নদীর উজানে ভারতীয় অংশে পানি বৃদ্ধির তথ্য ভারতীয় ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। তাদের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে দিনে দুবার তথ্য দেওয়া হয়; কিন্তু এবার বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশকে জানানো হয়নি। বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া গেলে বন্যার বিস্তারিত ও সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।

এদিকে ভারতের ত্রিপুরার গোমতী নদীর ওপর ডম্বুর ড্যাম ৩১ বছর পর ভারী বর্ষণের কারণে খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন যে, এই ড্যাম খোলার কারণেই বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতে গোমতী নদীর ওপর একটি ড্যাম রয়েছে এবং চট্টগ্রামের কাপ্তাইতেও একটি ড্যাম রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ ড্যামগুলো পূর্ণ করা হয়। কারণ যত বেশি পানি সংরক্ষণ করা যাবে, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই ড্যামগুলো জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বন্যা প্রতিরোধের জন্যও ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই ত্রিপুরা এবং কুমিল্লার নিম্নাঞ্চলে দীর্ঘদিন বন্যা হয়নি। যার কারণে দীর্ঘ ৩০ বছরে কুমিল্লায় কোনো বন্যা হয়নি। তাছাড়া পানি বেড়ে গেলে ভারতের আগরতলা অংশে ‘গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র ওই স্লুইসগেট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খুলে যায়। পানি কমলে তা আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, ২০ আগস্ট এসব এলাকায় ও ত্রিপুরায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর এ অতিবৃষ্টির কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া একটি নিম্নচাপ। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) সেখানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় কমলা সতর্কতা জারি করেছে এবং ত্রিপুরায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এসব তথ্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও পেয়েছে। তারা তাদের রাডারের মাধ্যমে বৃষ্টির বিষয়টি জানতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের কোনো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। যদি একদিন আগেও আমাদের সতর্ক করা হতো, তাহলে আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারতাম। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। যে ধরনের পূর্বাভাস আমরা যেভাবে দিই, তাতে চলমান বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগের বিষয়টি আগাম বোঝা যায় না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর