বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন কূটনীতিকের বৈঠক

সার্ক সক্রিয় করার আহ্বান

♦ পাকিস্তান চায় ভিসা পদ্ধতি সহজ ও সরাসরি ফ্লাইট ♦ এলএনজি রপ্তানি ও গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে আগ্রহী রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ♦ সেবা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সার্ক সক্রিয় করার আহ্বান

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন -পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়া, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের কূটনীতিক। বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন মডেলে সার্ক সক্রিয় করার জন্য পাকিস্তান হাইকমিশনারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি বাড়ানোর জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে চেয়েছেন দেশটির বিনিয়োগ সহায়তা। অপরদিকে বাংলাদেশে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। আর বাংলাদেশের সেবা খাত ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত।

গতকাল বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রথমে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটস্কি, এর পর পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এবং সবশেষে সৌদি রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পৃথক পৃথক বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন তিন কূটনীতিক। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

রাশিয়া : বৈঠকে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত দেশটির কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা, জ্বালানি অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। আলেক্সান্ডার মন্টিটস্কি বলেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালিত রাশিয়ান জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম ভোলা দ্বীপে আরও পাঁচটি গ্যাসকূপ এবং অভ্যন্তরীণ আরও কূপ অনুসন্ধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গ্যাজপ্রম ভোলা থেকে খুলনা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছর এটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা রাশিয়ার দূতকে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ অন্যান পণ্য আমদানি বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ড. ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও শিক্ষা সহযোগিতা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রসারের ওপর জোর দেন। বৈঠকে বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকা এবং চট্টগ্রাম বন্দরে এর গুরুত্বপূর্ণ মাইন পরিষ্কার কার্যক্রমের কথাও স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

পাকিস্তান : বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসাপদ্ধতি সহজ করার এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার অনুরোধ জানান তিনি। বাংলাদেশে চলমান বন্যার কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উদ্বেগ তুলে ধরে হাইকমিশনার জানান, পাকিস্তান বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক সক্রিয় করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পারস্পারিক সুবিধার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সার্ক হতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সম্পর্কের মডেল।

সৌদি আরব : বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তিনি দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে সক্ষম। রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, সৌদি আরবের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সেবা খাত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তার দেশের প্রতিষ্ঠান আরএসজিটি ইন্টারন্যাশনাল এবং আকওয়া পাওয়ারের বিনিয়োগের আগ্রহরে বিষয়টি প্রকাশ করেন।

বৈঠকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ১৯৭০-এর দশক থেকে সৌদি আরবে বসবাসকারী ৬৯ হাজার বাংলাদেশির পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি উত্থাপন করেন। প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে সৌদি আরবে কাজ করছে এমন তথ্য দিয়ে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একই সঙ্গে দেশটি থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অফিসিয়াল চ্যানেলে মাধ্যমে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার আনঅফিসিয়াল চ্যানেলে পাঠায় বলেও উল্লেখ করেন। সরকারি মাধ্যমে অর্থ পাঠানো হলে তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে বলেও জানান সৌদি রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশিদের জন্য হজ ও ওমরার ক্ষেত্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভ চালুর বিষয়টিও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবকে ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। তিনি গত বছর বিশ্ব ফুটবল সম্মেলনে সৌদি সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, বিশ্বকে পরিবর্তন করার জন্য খেলাধুলার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে সৌদি নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তার সরকার সৌদি আরব থেকে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

সর্বশেষ খবর