বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধান উপদেষ্টাকে এইচআরডব্লিউ

হত্যা গুম তদন্তে জাতিসংঘে রেজুলেশন চাওয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যা, গুম ও গুরুতর নির্যাতনের তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের আসন্ন অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব চাওয়া উচিত বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ অভিমত প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সোমবার এ চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে এইচআরডব্লিউর জাতিসংঘ জেনেভার উপপরিচালক লুসি ম্যাককারনান বলেন, গণবিক্ষোভের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব অনেক। তাই সরকারের উচিত সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে স্বাধীন অভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সমর্থন চাওয়া। অভ্যন্তরীণ এই তদন্ত ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে একে জাতিসংঘের সমর্থন ও তত্ত্বাবধানে কাজ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে জরুরিভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক তদারকি, র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র?্যাব বিলুপ্ত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সংস্কার ও অবমাননাকর আইন সংশোধনে জোর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন লুসি ম্যাককারনান। চিঠিতে বলা হয়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সব নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর শক্তিশালী মানবাধিকার প্রশিক্ষণ প্রটোকল বাস্তবায়ন করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহারের দায়মুক্তি দেয় এমন আইন বাতিল করা। গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে অন্তত ৪৪০ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে, যার বেশির ভাগই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র ও যুব সংগঠনের সহিংসতার কারণে নিহত ও আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলছে, ৫ আগস্টের পর আনুমানিক আরও ২৫০ জন মারা গেছে, যাদের বেশির ভাগই শেখ হাসিনার সমর্থকদের সহিংস প্রতিশোধের শিকার। সহিংসতার এই ঘটনাগুলো জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরির অনুমোদন ও পরিষদকে নিয়মিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতেও বলা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার এমন কর্মকর্তাদের বদলি করেছে, যারা রাজনৈতিক পক্ষপাতের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। পদত্যাগের দাবিতে করা বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। হাসিনা সরকারের পতনের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভেঙে পড়েছিল। হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সহিংসতার ঝুঁকিতে ফেলেছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে বেশির ভাগ পুলিশস্টেশন এখন কাজ করছে। মানবাধিকার কর্মীদের বরাত দিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা ও সমর্থকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইনি পরামর্শের যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে পূর্ববর্তী সরকারের ন্যায় অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি করছে।

সেপ্টেম্বরে আসছেন ভলকার তুর্ক : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক আগামী সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসছেন। তাঁর সফর নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের হাইকমিশনারের দপ্তরের আলোচনা চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডসহ সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের তিন সদস্যের প্রাথমিক কারিগরি দল বর্তমানে ঢাকা সফ?রে র?য়ে?ছেন। জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের প্রতি?নি?ধি দল?টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর