অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক - ♦ সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব নেওয়া হবে ♦ দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলে দক্ষ কর্মকর্তা বহাল থাকবেন ♦ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ♦ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাতকে সহায়তা দেওয়া হবে
কালো টাকা সাদা করার বিধি ও রীতি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরিষদ মনে করছে, বিগত সরকারগুলো জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদার করার যে সুযোগ দিয়েছে সেটি কার্যকর পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হয়নি। এ থেকে সরকারও তেমন কোনো সুবিধা পায়নি। এই পর্যালোচনা থেকে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে হজের ব্যয় কমানো, নিত্যপণ্য মূল্য সহনীয় রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ, সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব গ্রহণ, বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাতকে নীতি সহায়তা দেওয়া এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধি বাতিল করা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকে এক মাসের মধ্যে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর বিষয়ে একটি নোট প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দলটিকে সংবর্ধনা দেওয়া ও পাকিস্তানের মাটিতে দেশটিকে টেস্ট ম্যাচে প্রথমবারের মতো পরাজিত করায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকেও অভিনন্দন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আর্থিক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, কালো টাকা সাদা করার যে বিধি এবং রীতি সেটা বন্ধ করে দেওয়া। কারণ, এখান থেকে সরকার যেটুকু টাকা আনতে পারে সে অর্থ দিয়ে সরকারের খুব বেশি কিছু এগোয় তা না বরং মূল্যবোধের অনেক বেশি অবক্ষয় হয়। ফলে এটার বিরুদ্ধে স্পষ্ট একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় সংসদে অর্থ বিল পাসের মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা একটা আদেশের মাধ্যমে বলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, একটা ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আগে যেমন বলা হতো, কালো টাকা সাদা করা যাবে। এখন আর সেরকম বলা হবে না, উল্টো বলা হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়েও উপদেষ্টা পরিষদে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে যা করা দরকার সরকার সে কাজগুলো করা শুরু করে দিয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সমন্বয়ের কথা উঠেছে। বন্যার কারণে রপ্তানিমুখী যেসব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের যেন শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। হজের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, হজ একটা অনেক বড় ব্যাপার বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য। হজের ক্ষেত্রে একটা সিন্ডিকেট দেখতে পাই যেটা হজের প্যাকেজের মূল্য অনেকটা বাড়িয়ে তুলে। হজের যে খরচ সেটা যৌক্তিকভাবে যাতে কমানো যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হজের খরচ কত হবে, কত কমবে-এমন সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। তবে খরচটা যে বাড়তি এটা দেখা গেছে প্রাথমিক বিশ্লেষণে। সংস্কার প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখব। তাদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যা আসবে, সেগুলোও গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে একটি পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে। আমাদের আগে একটা পদ্ধতি ছিল জিও-এনজিও কো-অর্ডিনেশন (সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়), সেটাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জানা আছে। তিনি বলেন, সরকারকে কাজ চালাতে গেলে ভালো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার। যদি আমরা দেখি এফিসিয়েন্সি আছে তার ব্যাপারে কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। আমাদের তো কাজটা নিয়ে এগোতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগের সময় যারা ভালো পোস্টে ছিল, তাদের কাউকেই যদি না নেওয়া হয়, তাহলে আমি কাজ এগোব কেমন করে- সেটাও একটা বড় বিষয়। এ বিষয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, কারোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা জানাবেন। এই রেজিম, সেই রেজিম, আগের রেজিম, পরের রেজিম বললে আমাদের সঙ্গে অন্যদের তফাতটা কী? একটা তফাত তো আমাদের আনতে হবে।