অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে ঢাকায় আসছে জাতিসংঘের এ দলটি। গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন ভলকার তুর্ক। বিক্ষোভের সময় ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিষয়ে প্রতিবেদনের পাশাপাশি এসব লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণ, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য সুপারিশের লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। তথ্যানুসন্ধানী এ দলটি কাজের ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছে। এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের একটি অগ্রবর্তী দল গত সপ্তাহে (২২-২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সফর করেছে। সফরকালে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ছাত্রনেতারা, যাদের অনেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় আটক বা আহত হয়েছেন, তাদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। অগ্রবর্তী দলটি বিভিন্ন বৈঠকে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বলপ্রয়োগের তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা আলোচনা করেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর টেকসই উপায়ে কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে। তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে নাগরিক পরিসর, সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা, অভিঘাতের প্রশমন, ক্ষতিপূরণ, বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি সংস্কারের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকারের অন্য পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ কীভাবে করা হবে সেসব বিষয়। বিজ্ঞপ্তিতে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন হাইকমিশনার ভলকার। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজে পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। ভলকার তুর্ক এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের বিষয়টির একটি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে, যা সুরাহার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ও জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া জোরালোভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের গঠিত জাতীয় তদন্ত কমিশনের কাজে সহায়তার জন্য তারা প্রস্তুত। এ কাজ ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরামর্শে হওয়া উচিত। এ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদে র সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া উচিত, যার মধ্যে গুম হওয়া লোকজনের সন্ধানের নির্দেশনা যুক্ত রয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে, জবাবদিহি, পুনর্মিলন ও বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য মানবাধিকার সমুন্নত রাখার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর উন্মুখ হয়ে আছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।