বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে ইতিহাসের অন্যতম একটি কঠিন পরীক্ষার নির্বাচন। নির্বাচনের ফলাফলের জন্য বিএনপি সব সময়ই জনসমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে শত জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করে যেভাবে জনগণের আস্থা ধরে রেখেছে তার ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা জনগণের আস্থা নষ্ট করে। গতকাল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের দ্বিতীয় দিনে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন তিনি। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে জনসম্পৃক্ত থেকে জনগণের আস্থা অর্জন ও সেটি অক্ষুণ রাখতে হবে। এ সময় নেতা-কর্মীদের সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেন তারেক রহমান।
‘গুম প্রতিরোধ আইন’ করবে বিএনপি : এদিকে গতকাল আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে দেশে গুম প্রতিরোধে বিএনপি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী আইন করবে। এ সময় তিনি গুমের মতো মনুষ্যত্বহীন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য পৃথিবীজুড়ে ঐক্য ও সংহতির আহ্বান জানান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমার দলের পক্ষ থেকে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে দেশে আর কোনো ব্যক্তি যেন গুম না হয়, সেটি নিশ্চিতে আমরা জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত গুম প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন (আইসিপিপিইডি) অনুসারে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করব ইনশা আল্লাহ। মানবতার বিরুদ্ধে এই গুরুতর অপরাধের ন্যায়বিচার হতেই হবে। তিনি আরও বলেন, গুম মানবতাবিরোধী অপরাধ, যা মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন গুমের ঘটনায় লাখ লাখ দেশবাসীর মতো আমিও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে এটি প্রয়োগ করা হয়। তারেক রহমান বলেন, সমাজে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির জন্য শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমকে ব্যবহার করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো একযোগে প্রকাশ করেছে যে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৭ শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুম করেছে। এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নিখোঁজ এসব মানুষ তাদের পরিবারের প্রাণপ্রিয় সদস্য ছিলেন। তাদের স্বপ্ন, ভালোবাসা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অদৃশ্য মানুষগুলো কোথায় আছে আমরা জানি না। তবে তারা রেখে গিয়েছে মর্মান্তিক ও বেদনাবিধুর বাংলাদেশ। যেখানে আমাদের অর্জিত মানবাধিকার ও মূল্যবোধ লুণ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, গুম আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। আইসিসির রোম সনদের ৭ (২) অনুচ্ছেদে গুমকে মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মানবাধিকারের এই লঙ্ঘনের জন্য ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা গুম হওয়া মানুষগুলোর স্মরণে এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করি।