সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

লিটনের সেঞ্চুরির ম্যাচে চালকের আসনে বাংলাদেশ

আসিফ ইকবাল

লিটনের সেঞ্চুরির ম্যাচে চালকের আসনে বাংলাদেশ

ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অতিমানবীয় ব্যাটিং করেছেন লিটন দাস। শুধু প্রত্যয়ী ব্যাটিং নয়, হিমালয়সমান দৃঢ়তায় সেঞ্চুরি করে দলকে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের রেসে ফেরান। সপ্তম উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েন। এত কম রানে ৬ উইকেট হারানোর     পর দেড়শ রানের জুটিই এই প্রথম। ২৬ বলে ৬ উইকেটের পতনের পর দল যখন ধুঁকতে ধুঁকতে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে, তখন ফিনিক্স পাখির মতো দলকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলেন লিটন ১৩৮ রানের আকাশসমান দৃঢ়তায় একটি সেঞ্চুরি করে। উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে যোগ্য সঙ্গ দেন মিরাজ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন লিটন। সিরিজে টানা দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেন মিরাজ। গতকাল টেস্টের তৃতীয় দিন আউট হন ৭৮ রানে। মিরাজ ছাড়াও নবম উইকেটে হাসান মাহমুদকে নিয়ে ৬৯ রানের আরও একটি সময়োপযোগী জুটি গড়েন লিটন। দুই দুটি জুটিতে ৩৪ বলের ব্যবধানে ৬ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ২৬২ রান। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২৭৪ রান। ১২ রানে এগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বিপদে পরে পাকিস্তান। দিন পার করে ২ উইকেট ৯ রান তুলে। আজ চতুর্থ দিন স্বাগতিকরা ব্যাটিং করতে নামবে হাতে ৮ উইকেট নিয়ে ২১ রানে এগিয়ে থেকে। টেস্টের প্রথম দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র, তাতে চালকের আসনে বসেছে নাজমুল বাহিনী। দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি ১০ উইকেটে জিতে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

৪৩ টেস্টে লিটনের এটা চতুর্র্থ সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয়। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ১১৪ রান করেছিলেন। পরের দুটি সেঞ্চুরি করেন পরের বছর। ২০২২ সালে জানুয়ারিতে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৪ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২৭ মাস আগে। ২০২২ সালের মে মাসে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। ২৪৬ বলে ১৬ চার ও এক ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারসেরা। গতকাল ১৩৮ রানের ইনিংসটি খেলেন ২২৮ বলে ১৩ চার ও ৪ ছক্কায়। দ্বিতীয় দিন পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে গুটিয়ে বিনা উইকেট ১০ রান তুলেছিল নাজমুল বাহিনী। গতকাল খেলতে নেমে প্রথম উইকেট হারায় ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে। এরপর ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় ১১.৩ ওভারে দলীয় ২৬ রানে। তখন মনে হচ্ছিল টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সর্বনিম্ন দলগত স্কোর ৪৩ রানের রেকর্ড ভেঙে ফেলবে। কিন্তু সপ্তম উইকেট জুটিতে লিটন ও মিরাজ ৪০.২ ওভারে ১৬৫ রান যোগ করেন। যা সপ্তম উইকেট জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড। মিরাজ ৭৮ রান করেন ১২৪ বলে ১২ চার ও এক ছক্কায়। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট পড়ার পর ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসের এই প্রথম দেড়শ রানের জুটি এটা। আগের রেকর্ডটি ছিল পাকিস্তানের আবদুল রাজ্জাক ও কামরান আকমলের। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচিতে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১১৫ রান যোগ করেছিলেন দুজনে। এ ছাড়া ১৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এনক্রুমার বনার ও জশুয়া ডি সিলভা ১০০ রানের জুটি গড়েছিলেন সপ্তম উইকেটে। অবশ্য সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিমের। রাওয়ালপিন্ডিতেই ১৯৬ রানের জুটি গড়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর