ভয়ংকর বন্যায় সবকিছু হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো পানিবন্দি লাখ মানুষ। কুমিল্লায় পানি নামছে ধীরে। সঙ্গে বাড়ছে রোগের প্রাদুর্ভাব। চট্টগ্রামে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন বন্যার্তরা। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফিরে অনেকে নিজের ঘরবাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছেন। খাগছড়িতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
লক্ষ্মীপুর : বন্যার পানির সঙ্গে ঘর ভেসে গেছে লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী নদীপারের হাজারো বাসিন্দার। শেষ সম্বল খুইয়ে দিশাহারা খেটে খাওয়া এসব মানুষ। কোথায় মাথা গোঁজার আশ্রয় পাবেন, সংসারই বা কীভাবে চালাবেন, জানেন না কিছুই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বাঁধ নির্মাণ আর পুনর্বাসনে সহায়তা চান তারা।
সরেজমিন লক্ষ্মীপুর সদরের টুমচর ইউনিয়নের মধ্য কালিরচর রহমতখালী নদীর পাড় ঘুরে দেখা যায়, পানির তীব্র স্রোতে ভাঙছে ভিটেমাটি, কাঁদছে নদীপারের বাসিন্দা। চোখের সামনে তিন পুরুষের ভিটে নিমিষেই শেষ। নদীপাড়ে নির্বাক বসে আছেন তাহেরা বেগম। জীবনসায়াহ্নে নতুন এক যুদ্ধ তার। চোখের জলে বর্ণনা দিলেন ঘর ভেসে যাওয়ার দুর্বিষহ সময়ের। তাহেরা বলেন, স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল কেড়ে নিয়েছে বন্যার পানি। ভিটেমাটি কিছুই রাখল না। এখন কোথায় যাব, কোথায় থাকব। তার পাশেই দিশাহারা তাহেরা বেগমের ছেলে হারুনুর রশীদ। নদীভাঙনে ঘরের আসবাবপত্র হারিয়েছেন তিনিও। চার মেয়ে আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোথায় ঘর বাঁধবেন, জানেন না কিছুই। অপলোক চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে তার অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে সরকারি সহযোগিতার আকুতি জানান তিনি।ফেনী : ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। তার পরও এখনো পানিবন্দি লাখো মানুষ। প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরগতিতে নামছে পানি। বন্যার সময় যারা বাড়িঘর ছেড়েছেন তারা বাড়িতে ফেরা শুরু করেছেন। বাড়িফেরা মানুষ জানান, তাদের সাজানো সংসারের সব কিছু বন্যায় ধ্বংস করে দিয়েছে।
এখনো শহরের, মধুপুর পানিতে তলিয়ে আছে। সদর উপজেলার মোটবি, শর্শদি, ধলিয়া, পাঁচগাছিয়া, ফাজিলপুর, ধর্মপুর ও ফরহাদ নগরের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে। দাগনভূঞার পূর্বচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি দশা থেকে এখনো মুক্তি পায়নি। অন্যান্য উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখনো পানির নিচে রয়েছে।
কুমিল্লা : দক্ষিণ কুমিল্লায় ধীরে নামছে বন্যার পানি। এতে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। খাল দখল হওয়ায় পানি ধীরে নামছে বলে জানা গেছে। এদিকে বন্যায় ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এসব রোগে জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশাপাশি তপইয়া, মনপাল, রাজাপুর ও ষোলদনা। মনপাল গ্রামে হাজারো পরিবারের বসবাস। এখানে দু-তিনটি পরিবার ছাড়া পুরো গ্রামের বাড়িঘরে পানি। কেউ খাটের ওপর, কেউ ভবনের ছাদে কিংবা উঁচু এলাকার আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়িসহ অন্যান্য বন্যাকবলিত এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে গত কয়েকদিনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করছেন বন্যার্তরা। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফিরে অনেকে নিজের ঘরবাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছেন। ঘর থেকে বন্যায় পানির সঙ্গে আসা কাদামাটি পরিষ্কার করে বসবাস উপযোগী করার চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে যাদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের অনেকে এখনো বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বাড়িঘর যেমন ডুবেছে, ঠিক তেমনি ফসলি জমি, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পাঁচটি উপজেলা ডুবলেও সড়কের ক্ষতি হয়েছে নয়টি উপজেলায়। জেলার পাঁচটি উপজেলা চেংগীও মাইনি নদীর পানিতে ডুবেছে। এগুলো হলো খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। পৌর শহরের শান্তিনগর, শব্দ মিয়াপাড়া, মহিলা কলেজ সড়ক, গোলাবাড়ি ইউনিয়নের গঞ্জপাড়া, ঠাকুরছাড়া, উত্তরগঞ্জপাড়া মেরুংয়ের বহু সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ।
এলজিডি বিভাগ বিভিন্ন সড়কের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বলে জানান।