মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

সম্পদের হিসাব না দিলে ব্যবস্থা

সরকারি কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, পাঁচ সদস্যের কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেছেন, সরকারি সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। সম্পদের হিসাব কীভাবে জমা দিতে হবে সেজন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিবরণী জমা না দিলে খবর আছে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সম্পদের হিসাব জমা না দিলে কী হবে সেটা আমরা অবশ্যই বলে দেব- দণ্ডটা কী হবে, তার বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জমা না দিলে খবর আছে, সোজা কথা। আইনানুগ খবর আছে। খবরটা কী সেটা যখন চিঠি (ফরম) দেব, তখন বলে দেব। যত বড় যেই হোক, চোরকে চোর বলতে হবে। সচিব বলেন, এতদিন তো অনেক কথা শুনেছেন, জিরো টলারেন্স, হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি। এসব শুনে আমার লাভ নেই, আমি বলতেও চাই না। আমাদের জনস্বার্থে দুটি এজেন্ডা- একটি হলো রাষ্ট্র, আর একটা হলো জনগণ। যা করার, যেখানে যেটা করার আমরা করতে পিছ পা হব না। আমাদের কোনো পাওয়ার রিসার্চ করতে হবে না। বিধি মোতাবেক কাজ করব, সাহসের সঙ্গে কাজ করব। সরকারি চাকরিতে মোটামুটি ১৫ লাখ কর্মচারী রয়েছেন জানিয়ে সচিব বলেন, আগে আমরা মনে করতাম শুধু কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে, যারা কর দেন। কিন্তু, দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পিওন অথবা ড্রাইভার ৪০০ কোটি বা ৯ কোটি টাকার মালিক। এ রকম তো পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য মডার্ন ও আপডেটেড ওয়েতে যাতে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে পারে, সেজন্যই কাজটা শুরু করেছি। তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে এনবিআরের একজন প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগের একজন প্রতিনিধি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এই কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন। সিনিয়র সচিব বলেন, এখন সম্পত্তির হিসাব দিতে পাঁচ রকমের ফরম রয়েছে। কমিটি একটি ফরম্যাট তৈরি করবে, যাতে মানুষের প্রশ্ন করতে না হয়, বুঝতে সমস্যা না হয়। সবাইকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। জিরো সম্পদ থাকলেও হিসাব দিতে হবে। শুধু ব্যাংক হিসাব না, জমি-জমা সঞ্চয়পত্র কোথায় কী আছে সব হিসাব দিতে হবে। সম্পদের হিসাব দিলে আমরা মনে করি দুর্নীতি কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, এই কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে এই ফরম তৈরি করবে। ফরমটি হবে বাংলায়। এরপর আমরা বলে দেব সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে সম্পদের হিসাব জমা দেবে। মূলত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এটি ফাংশনাল হবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা ফরমগুলো অফিসে অফিসে পৌঁছে দেব। আমরা তখন বলে দেব কোন তারিখের মধ্যে হিসাব দাখিল করতে হবে। তিনি জানান, সম্পদের হিসাব বছরে একবার দিতে হবে। সেটা হয় পয়লা জানুয়ারি, না হয় পয়লা জুলাই, বিষয়টা পরে ঠিক করা হবে। মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকার তো বহুবার পরিবর্তন হয়েছে। এভাবে কেউ পালায়? বায়তুল মোকাররমের খতিব কেন পালাবেন? উনিও তো পালিয়েছেন। আমার ব্যাচমেট কয়েকজন সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাঁরাও পালিয়েছেন। এই বিবরণী জমার পর দুদক বিবেচনা করবে, কার সম্পদের হিসাবের জন্য তলব করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও সম্পদের হিসাব দিতে হবে কি না এ প্রশ্নে সচিব বলেন, এ টু জেড হিসাব দিতে হবে। আমাকে দিয়ে শুরু হবে, আমার যে সম্পদ, আমার একটা লোনের গাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। সরকারি বেতন খায় এমন সবাইকে হিসাব দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর