বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

শিল্পকারখানার নিরাপত্তা চাইলেন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ সময় ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের সব শিল্পকারখানার সামগ্রিক নিরাপত্তার দাবি জানান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন।

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ আশ্বাস দেন। সম্প্রতি শ্রমিক বিক্ষোভসহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শতাধিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বৈঠক শেষে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফআইসিসিআইর সাবেক সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

ব্যবসায়ী নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ড ও ভাঙচুরের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনেন। প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশের শিল্প প্রবৃদ্ধিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমরা শিল্পকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যেতে চাই। ছাত্র-জনগণের বিপ্লব দেশে আশার নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার শিল্প, অর্থ ও উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ব্যবসায়ী নেতারা পোশাক ও ওষুধ খাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার বিষয়টি তুলে ধরেন, তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, দেশের বাইরে বসবাসকারী গ্রুপসহ বহিরাগতদের প্ররোচনায় কারখানাগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে। শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে বলেন, তার সরকার কারখানাগুলোকে সহিংসতা ও হামলা থেকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া। তিনি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ব ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আরও অর্ডার পাওয়ার প্রয়াসে শ্রম সংস্কার করার জন্য শিল্প নেতাদের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার একটি বড় সুযোগ আছে। আমাদের শ্রম আইনকে আইএলও মানদন্ডে আপগ্রেড করতে হবে। আমি সারা বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এবং দেশের নির্মাতাদের কাছে আরও অর্ডার দিতে আগ্রহী।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যেসব কারখানার ভিতরে শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, সেই দাবিগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে কারখানার ফটকে বহিরাগত শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। বহিরাগতরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকেরা লে-অফ ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। তখন পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।

এদিকে, মীর নাসির হোসেন গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গত সোমবার যখন ১০০-এর বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, তখন আমরা জরুরি ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানাই। বৈঠকে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে শিল্পকারখানার নিরাপত্তা চেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, সরকারের পক্ষে থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যৌথ বাহিনীর অভিযানকে আরও শক্তিশালী করার কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ব্যবসায়ীদের সহায়তাও চেয়েছেন।

জানা যায়, কয়েক দিন ধরে মজুরি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরাও চাকরির দাবির পাশাপাশি নিয়োগে নারী-পুরুষের সমতা চেয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। এর ফলে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই অস্থিরতা ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অস্থিরতায় ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্পপুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা গত সোমবার উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পের নিরাপত্তায় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এরপর যৌথ অভিযানের নির্দেশনা আসে।

 

 

সর্বশেষ খবর