বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, প্রথম দিকে তারা কিছুটা আতঙ্কিত ছিল- সেনা অভিযানের ভয়ে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তাদেরকে যমুনায় ডেকে আপ্যায়ন করেন এবং অতি অল্প সময়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যেটি নেই- একজন জেসিওকে মেজর জেনারেল পদোন্নতি দিয়ে বিডিআর বাহিনীর মহাপরিচালক হিসেবে তিনি নিয়োগ দেন। এটা অবিশ্বাস্য কর্মকান্ড ছিল। একজন সুবেদারকে মুহূর্তের মধ্যে মেজর জেনারেল করা হয়। এ সময় বিডিআর বিদ্রোহের পরে যেসব সেনা কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়েছে, তাদেরকে পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফেরানোর দাবি জানান তিনি। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মেজর হাফিজ আরও বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানা হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত ও বিচারের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি পত্র (চিঠি) দেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের নির্মোহ তদন্ত হলে নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার প্রাথমিক কাজ ছিল এই হত্যাকান্ড। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিডিআরদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছিল, তাতে পরিষ্কার যে এই হত্যাকান্ড সুপরিকল্পিত। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজশে এই হত্যাকান্ড হয়েছিল। বিদ্রোহের আগে ২২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তোরাব আলীর বাসায় বিডিআর সৈনিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছিল। পরে আমরা জানতে পেরেছি, সেখানে এই বিদ্রোহটি কীভাবে সংঘটিত হবে, কীভাবে হত্যাকান্ড চালানো হবে, লাশ গুম করা হবে সেটা ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়। বিডিআর হত্যাকান্ডের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকান্ড অত্যন্ত রহস্যজনক ছিল বলে দাবি করেন মেজর (অব.) হাফিজ। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যেন কোনো ধরনের অ্যাকশনে না যায়, তার জন্য তার যুমনা অফিসের পাশে একটি কক্ষে বসিয়ে রেখেছেন। তাদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা নেই, যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অপারেশন করলে প্রাণগুলো রক্ষা করা যেতো, সেটা না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা নষ্ট করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা মেজর হাফিজ জানান, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, বিদেশি কোনো হস্তক্ষেপ আছে কি না, কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছিল তার জন্য আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২৮ আগস্ট এই চিঠি দিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টাকে। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই নারকীয় হত্যাকান্ডের নতুন তদন্ত ও পুনর্বিচারের কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস।