বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্বর্ণ চোরাকারবারি দিলীপ গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বর্ণ চোরাকারবারি দিলীপ গ্রেপ্তার

দেশের শীর্ষ সোনা ও হীরা চোরাচালানি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাজধানীর গুলশানে গতকাল রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাকে পুলিশের এলিট ফোর্স র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র?্যাব গ্রেপ্তার করে। র‌্যাব ১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। থানায় হস্তান্তর করা হবে। র‌্যাব জানায়, দিলীপ আগরওয়ালার বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালান, বিদেশে অর্থ পাচার থেকে শুরু করে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আগরওয়ালাকেও আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আগরওয়ালা গুলশানের আকাশ টাওয়ারের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে অবস্থান করছেন বলে র‌্যাব নিশ্চিত হয়ে এ অভিযান চালায়। রাত ১০টায় র‌্যাবের চারটি গাড়ি প্রথমে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের সামনে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের নিচে কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাত ১১টায় র‌্যাবের আরও চারটি গাড়ি এসে থামে ওই ভবনের সামনে। এরপর পুরো ভবন ঘিরে রাখেন র‌্যাব সদস্যরা। ২০ তলা ভবনের নিচ তলাসহ মোট ৬টি  ফ্লোরে রয়েছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শোরুম এবং অফিস। র‌্যাব সদস্যরা সবকটি ফ্লোরে তল্লাশি চালান। রাত ১টার দিকে দিলীপের খোঁজ মেলে। ধরা পড়েন স্বর্ণ চোরাচালানি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় র‌্যাব ওই ভবনের নিচ তলায় অবস্থান করছিল। দিলীপও সেখানেই র‌্যাবের হেফাজতে ছিলেন। এদিকে স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির)। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডি। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংস্থাটির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুমের মাধ্যমে উন্নতমানের কাচের টুকরোকে প্রকৃত ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রয়, দুবাই-সিঙ্গাপুরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাগি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে পাওয়ায় সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম কর্তৃক মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করেছে। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিন। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা পরপর দুবার আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ছিলেন।

ইতিপূর্বে দুদকের অনুসন্ধানে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যের কারণে দুদক আর বেশিদূর এগোতে পারেনি।  জানা যায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়াল বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং শুল্ক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে তার অবৈধ কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। মেসেনটেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথাকথিত হীরা বানিয়ে তা অলংকার হিসেবে বিক্রির প্রতারণা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিছু দিন ব্যবহারের পর এগুলো কালো হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুরসহ প্রায় ১০০টির কাছাকাছি শোরুম অল্প কয়েক দিনের মধ্যে স্থাপন করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। দুদকে করা ওই অভিযোগে বলা হয়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী দিলীপ আগরওয়ালা বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দুদকের এক সহকারী পরিচালক জানান, দুদক টিম অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণাদি হাতে নিয়ে দিলীপ আগরওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে একাধিকবার তলবও করে। অনুসন্ধানকালে তার দুর্নীতির সব দিক খতিয়ে দেখেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

শুরুতে ঢাকার বিজয়নগরে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিজের অফিস করতেন এবং পাশের মহল্লায় দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে ওই সময় ঢাকায় দিলীপ কুমার কীসের ব্যবসা করতেন তা তার ঘনিষ্ঠজনরাও কেউ কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু দুই দশকের ব্যবধানে দিলীপ আগরওয়ালা এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক, চুয়াডাঙ্গায় আসেন হেলিকপ্টারে চড়ে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেই সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পোস্টার এবং বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পোস্টারের সঙ্গে নিজের ছবি ছেপে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে প্রচার করেন।

 

সর্বশেষ খবর