বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্বৈরাচার পতনের এক মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বৈরাচার পতনের এক মাস

স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার কবলমুক্ত হওয়ার এক মাস পার করছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি এখন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন। একদিকে স্বৈরাচারের থাবামুক্ত হওয়ার আনন্দ, আরেক দিকে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে সময় পার করছে দেশের মানুষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার সামনে মুখথুবড়ে পড়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন কেন্দ্র করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার ১ হাজারের বেশি মানুষ। চোখের আলো নিভে গেছে ৪০০ জনের। শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন শত শত আমজনতা। শিশু, কিশোর, নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেছে গুলি। হাসিনা সরকারের দমন পীড়নের সামনে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তরুণ যুবা গৃহিণী, অভিভাবক সবাই স্বৈরাচরের রাহুমুক্ত হতে একজোট হয়েছিলেন রাজপথে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে উঠে আসে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা। এই গণদাবি স্বৈরশাসকের ভিত নাড়িয়ে দেয়। সরকারের পুলিশ ও দলীয় পেটোয়া বাহিনীর গুলি, হত্যার বীভৎসতায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। প্রবল জনরোষের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ওইদিন দুপুরে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের গোড়ায় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মধ্য জুলাইয়ে এসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় রূপ নেয় গণবিস্ফোরণে। সরকারের অত্যাচার নিপীড়নের সঙ্গে যোগ হয় স্বৈরাচারের পদলেহনকারী কিছু অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তার মানবাধিকারবিরোধী নৃশংসতা। নির্বিচার গণহত্যা নিশ্চিত করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা শপথ নেন। উপদেষ্টাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম।

ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে গিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের অনেক এমপির বিরুদ্ধে নিহতদের পরিবার হত্যা মামলা  দায়ের করছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার পরিবারের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যেই স্বৈরাচারী সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। রিমান্ডে বেরিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তিদের দমন, পীড়ন, লুটপাট, দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য।  

এদিকে বিচারের আওতা থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দেশে থাকা মন্ত্রী, এমপিরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার এখন আর কোনো পাসপোর্ট নেই। ভারতের ভিসানীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশি কূটনীতিক পাসপোর্ট থাকলে তারা ভিসা ছাড়াই ভারতে আসতে পারেন এবং তারা চাইলে টানা ৪৫ দিন ভারতে থাকতে পারেন। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের আজ এক মাস পূর্ণ হচ্ছে। তার পরবর্তী গন্তব্য অথবা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে চলছে গুঞ্জন।

সর্বশেষ খবর