শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদি মার্চ কর্মসূচি

আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ

ঢাবি ক্যাম্পাসে গতকাল শহীদি মার্চে ছাত্র-জনতার ঢল -রোহেত রাজীব

পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ। পানি লাগবে কারও? বলতে বলতে বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। শহরের রাস্তায় রিকশার পাদানি ধরে ঝুলতে থাকা গুলিবিদ্ধ তরুণ। ঘরের নিরাপত্তা ভেঙে হেলিকপ্টার থেকে ছুটে আসা বুলেটে ঝরে যাওয়া মা-শিশুর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এক মাস পূর্তির দিনে আবারও স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হলো রাজধানীর রাজপথ। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ‘সফল হোক সফল হোক, শহীদি মার্চ সফল হোক’ ‘শহীদদের কারণে, ভয় করি না মরণে’ ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ স্লোগান দিয়েছেন ছাত্র-জনতা।

পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে এদিন বিকাল ৩টা থেকে দলে দলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমায়েত হন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। মার্চটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাব-কলাবাগান-সংসদ ভবন-ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার-শাহবাগ-রাজু ভাস্কর্য হয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে  সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেওয়ায় শহীদ মিনারে ফিরতে ফিরতে লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হন এ পদযাত্রায়। এরপর সেখানে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়। বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি বিশাল আকৃতির ফিলিস্তিনের পতাকাও এ পদযাত্রায় দেখা যায়। শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে পাঁচটি দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এগুলো হলো- গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা; শহীদ পরিবারকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান করা; প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা; গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করা এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যারা ভেবেছিল আমাদের ছাত্র সমাজে বিভাজন তৈরি হয়েছে তাদের দেখিয়ে দিতে এই শহীদি মার্চ। এই ৫ সেপ্টেম্বর হলো ৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি। ফ্যাসিবাদের দোসরদের দেখিয়ে দিতে চাই যে ছাত্র-জনতা এখনো আগের মতোই একতাবদ্ধ রয়েছে এবং স্বৈরাচারের কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেবে না। ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যেমন পড়ার টেবিলে তেমনই রাজপথেও থাকবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সবসময় সজাগ থাকবে। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে তাদের প্রতিহত করতে ছাত্র সমাজ লড়ে যাবে। অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ছাত্র-জনতার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এই শহীদ ভাইদের রক্ত এবং স্পিরিট বৃথা যেতে দেব না। প্রতিনিয়ত জনতার সাপোর্ট আছে বলেই আমরা ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশ ছাড়া করতে পেরেছি, আমাদের এক ডাকে বাংলাদেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ এক হয়েছে। ছাত্র-জনতা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই মিছিলে যোগ দিয়েছে আজকের কর্মসূচি সফল করার জন্য। এ সময় সম্প্রতি চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে একজন সংস্কৃতি কর্মী বলেন, বাচ্চাদের গায়ে যারা গরম পানি ঢালতে চেয়েছে তাদের আমি থু থু দিয়ে নিন্দা জানাব, প্রতিবাদ করব। এ ছাড়াও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এখনো শেষ হয়নি এটা দমন করা জরুরি। পদযাত্রায় যোগ দেওয়া জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদরাসার হাবিবুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, যাত্রাবাড়ীতে যখন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অত্যাচার শুরু হয় তখন আমার অনেক সহপাঠী আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তারা এখনো অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠেনি। স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু দোষীদের বিচার হতে হবে।

পদযাত্রায় যোগ দিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঠিক এক মাস আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। যুগে যুগে ছাত্র-জনতা দেখিয়ে দিয়েছে যে এই বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির ঠাঁই নেই। আমাদের মানচিত্রে যদি কোনো শকুন নজর দেয় তাহলে তার পরিণতি হবে ফেরাউনের মতো।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের র‌্যালি ও মিছিলে বিভিন্ন মাদরাসা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, লক্ষ্মীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, পঞ্চগড়, মাগুড়া, নড়াইল, মাদারীপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালীর গলাচিপা, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, দিনাজপুর ও কিশোরগঞ্জে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সর্বশেষ খবর