শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

ব্র্যাক ব্যাংক ২৫৫৩ কর্মী ছাঁটাই করেছে

শাহেদ আলী ইরশাদ

বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি গত তিন বছরে আড়াই হাজারের বেশি কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে। এর মধ্যে অনেককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা অধস্তনদের পদচ্যুত করার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপের উদাহরণ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা নিগ্রহের তথ্য উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে।

জানা যায়, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ তদন্তকাজে নিয়োজিত হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিন বছরে ২ হাজার ৫৫৩ জন কর্মী পদত্যাগ করেছেন। যার ৯৫ শতাংশ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। কিন্তু কার্যত এদের সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিযোগ, যা ইঙ্গিত করে যে, কর্মচারীদের পদত্যাগের হুমকি বা পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে দেখা যায়, ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন কারণে ২০২১ সালে ৭২০ জন, ২০২২ সালে ৯৯৮ জন, ২০২৩ সালে ৮৩৫ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৫ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। প্রতিবেদনে ব্যাংকের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অসংগতি ধরা পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

পদচ্যুতদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, কর্মীদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাঁরা প্রত্যাখ্যান করলে বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের বিষয়টি মাথায় রেখে সবাই পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে ব্র্যাক ব্যাংকের যোগাযোগ ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ইকরাম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদাসীন ছিল ব্র্যাক ব্যাংক। পরিদর্শনে দেখা গেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের একই শাখা বা বিভাগে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ১ হাজার ৫৪৮ জন কর্মচারীকে নিয়োজিত রেখেছিল। এমনকি কোনো কোনো ব্যাংক কর্মী ১৯ বছর ধরেও একই বিভাগে ছিলেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে ব্যাংক বলেছে, প্রধান কার্যালয়ে বিশেষ কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ অফিসারদের প্রয়োজন। এদিকে পরিদর্শক দল যখন ২৮ জন এলোমেলোভাবে নির্বাচিত কর্মকর্তার নিয়োগের নথি পর্যালোচনা করে, তখন ব্যাংক প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় যে, এ কর্মচারীদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। অবশেষে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের বিধানগুলো মেনে চলতে অনিচ্ছুক ছিল ব্র্যাক ব্যাংক। প্রতিবেদনে গুরুত্ব দেওয়া হয় একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় এ বি এম সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে, যিনি একটি ঋণ আবেদনে জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। সেই মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলামকেই ব্র্যাক ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তপ্রধান করা হয়, যিনি একই বিভাগে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত ছিলেন। অথচ তাঁর নিয়োগের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও একই বিভাগের একজন কর্মকর্তা কাশফিয়া আশফাককে মৌখিকভাবে তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব দেন; যা সিদ্দিকের পদত্যাগের দিকে পরিচালিত করেছিল বলে তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়। ব্যাংক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করেনি। প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাঁরা বর্ধিত সময়ের জন্য একই বিভাগে রয়েছেন তাঁরা বাধ্যতামূলক পদত্যাগ বা অধস্তনদের পদত্যাগের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করেছেন। প্রতিবেদনে ব্র্যাক ব্যাংককে বিষয়টি পুনঃতদন্ত করতে এবং তদন্তপ্রধান হাফিজুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারী আচরণের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এসব নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটি।

সর্বশেষ খবর